নুর নবী রবিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২

চবি ক্যাম্পাসে বিশ্বকাপ ফুটবলের আশীর্বাদ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

রাত দেড়টা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার চত্বরে ভিড়। পর্দায় চলছে ব্রাজিল বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচ। ৩ হাজার ৯৫১ কিলোমিটার দূরের পারস্য উপসাগর তীরের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে এখানেও। তাই কিছুক্ষণ পর পর উল্লাসে মাতছে দর্শকরা। ভিড় থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ডিমের পিঠা বানানোর কাজ করছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। মাঝে মাঝে মাথা তুলে তাকান টেলিভিশনের বড় পর্দার দিকে। খেলার চেয়ে মনোযোগ বেশি তার ছোট্ট পুঁজির ব্যবসা নিয়ে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব মোহাম্মদ সালাউদ্দীন হাটহাজারী উপজেলা বাজারের মোড়ে নিয়মিত পিঠা বিক্রি করেন। বিশ্বকাপ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে মানুষের সমাগম বেশি হয় জেনে এখানে আসেন আজকাল। খেলার বিরতির সময় শিক্ষার্থী ও দর্শকরা তার কাছ থেকে পিঠা কেনেন। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচের দিনগুলোতে বেশি বিক্রি হয়। এখানে এলে হাটহাজারীর চেয়ে বিক্রি বাড়ে। কিছুটা বাড়তি লাভের আসায় এখানে আসি।

কোন দল সমর্থন করেন- এই প্রশ্নে মিষ্টভাষী লোকটির পছন্দ আকাশি নীলের আর্জেন্টিনা। সালাউদ্দীনের পাশেই খই ভাজছেন রাতুল। চোখজোড়া পর্দায় থাকলেও দক্ষ দুই হাত করে যাচ্ছে প্যাকেটিংয়ের কাজ। খই মেশিনে ঢালছে তার ছোট্ট সহযোগী। বিশ্বিবিদ্যালয়ের কাছেই নন্দীর হাটে থাকেন। রাতুল গরমের সময় ভ্যানে করে আইসক্রিম বিক্রি করে। শীত মৌসুম এলে নেমে যান খই বিক্রি করার কাজে। তৎক্ষণাৎ খই ভেজে বিক্রি করেন বিভিন্ন মাহফিল বা সমাবেশে।

বাড়ির কাছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে মানুষের জমায়েতের কথা শুনে হাজির হয়েছেন খই ভাজার যন্ত্র নিয়ে। আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের ম্যাচ থাকলে গড়ে ৭৮ কেজি খই বিক্রি হয়। মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের মতো তারও পছন্দের দল আর্জেন্টিনা।

শহীদ মিনারের পশ্চিম পাশের রাস্তায় আলু কেটে চিপস বানিয়ে বিক্রি করেন ১৮ বছরের রমজান। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে আনারস, পেয়ারা কেটে বিক্রি করে। তার বাবা ও ছোট ভাইও যুক্ত আছে এই কাজে। শীতের রাতে আনারস বা পেয়ারা খেতে পছন্দ করবে না লোকজন, তাই রমজান বিক্রি করছে তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত করা চিপস। ক্রেতার সামনে আলু কেটে বানিয়ে দেয় সে।

বিশ্বকাপের খেলাকে কেন্দ্র এভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার চত্বরে ভাসমান দোকান বসেছে। কেউ বাদাম, কেউ চা, কেউ বা নাশতা বিক্রি করছে। এদিকে গভীর রাতে চা-নাশতা-পিঠা খেতে পেরে আনন্দিত খেলা দেখতে জড়ো হওয়া আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরাও। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, খেলার সময় অনেক চিৎকার করি, খিদা লাগে, শীতের রাত, চা-নাশতা খেতে পেরে ভালো লাগে।

এভাবে রাত জেগে খেলা দেখা মানুষরা যেমন খুশি হচ্ছে খেতে পেয়ে, তেমনি সালাউদ্দীন রাতুল ও রমজানরা খুশি বাড়তি উপার্জন করতে পেরে। বিশ্বকাপ তাদের রুটিরুজির জন্য আর্শীবাদও বলা যায় বটে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close