মিজান রহমান

  ১৭ মার্চ, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু যেভাবে মহানায়ক

তখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। খাদ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তারা গোপালগঞ্জ স্কুল পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন কাজ শেষে বাংলোতে ফেরার পথে একদল ছাত্র তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। অকপটে বলে যায় বর্ষাকালে ছাত্রাবাসের ছাদ চুইয়ে পড়া পানিতে ছাত্রদের বিছানাপত্র নষ্ট হওয়ার কথা। ছাত্রাবাসটি মেরামতের দাবি জানায় তারা। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তার স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে ১,২০০ টাকা মঞ্জুর করেন এবং ছাত্রাবাসটি মেরামত করার নির্দেশ দেন। এই ছাত্রদের নেতার নাম ছিল খোকা। হ্যাংলা, ছিপছিপে দৈহিক গঠন, তবে সুশ্রী। ছেলেটির ভালো নাম ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। খোকা নামের সেই ছেলেটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারি।

‘স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক তুমি, তোমার তরে পেলাম বাংলা নামক ভূমি। দেশের জন্য কারাবরণ করেছ শতবার, তোমার মতো মানুষ দেখিনি তো আর। বাংলার রূপ দেখলে পরে তোমায় মনে পড়ে, তুমি আছো তুমি থাকবে হাজার বছর ধরে।’ কবি এম শিকদারের এই পঙ্তিতে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের বটবৃক্ষ, মহানায়ক।

গোপালগঞ্জের নিভৃতপল্লী টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া ‘খোকা’ পরিণত বয়সে মহানায়ক হয়ে উঠেছিলেন। শৈশব থেকে তার মনটাও ছিল শিশুদের জন্য মমতায় ভরা। তাই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে এ দেশের শিশুরা পেয়েছে তাদের জন্য বিশেষ দিন- ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে।

বঙ্গবন্ধু একজন সাধারণ ছাত্রকর্মী থেকে রাজনৈতিক কর্মী হয়েছেন এবং তারপর দলের ছোট নেতার ভূমিকায় সংগঠকরূপে মূল দায়িত্ব পালন করে পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। আর একসময় দল ছাপিয়ে জাতির নেতা, ইতিহাসের মহানায়ক এবং জাতীয় জীবনের অমর ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি সেই মহানায়কের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। শেখ ?মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘরে। নানা শেখ আবদুল মজিদ আদরের নাতির নাম শেখ মুজিবুর রহমান রাখলেও বাবা-মায়ের কাছে ছিলেন ‘খোকা’। ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে ওঠা এই খোকা ছেলেবেলায় কেমন ছিলেন, তার কিছু বিবরণ পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে।

তিনি লিখেছেন, ‘১৯৩৪ সালে যখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছোট সময় আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম।’

পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সবার আদর পাওয়ার বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আব্বার কাছ থেকেই আমি লেখাপড়া করি। আব্বার কাছেই আমি ঘুমাতাম। তার গলা ধরে রাতে না ঘুমালে আমার ঘুম আসত না। আমি বংশের বড় ছেলে, তাই সব আদর আমারই ছিল।

স্বভাবে দুরন্ত হলেও ছোটবেলায় নানা রোগও তাকে কম ভোগায়নি। শৈশবে বেরিবেরি রোগ হওয়ার পর হৃদযন্ত্র হয়ে পড়েছিল দুর্বল, ১৯৩৬ সালে গ্লুকোমা হওয়ায় অস্ত্রোপচারের পর চোখে উঠেছিল চশমা। বেশ কিছুদিন পড়াশোনা বন্ধ থাকে। পরে ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন তিনি।

যে বয়সটা দুরন্তপনার, সে সময়ই সংসার জীবনে পা রাখতে হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই অনেকে আশ্চর্য হবেন। আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স বারো-তেরো বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাওয়ার পর ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, ‘তোমার বড় ছেলের সঙ্গে আমার এক নাতনির বিয়ে দিতে হবে। কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব।’

‘রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সঙ্গে আমার বিয়ে রেজিস্ট্রি করে ফেলা হলো। আমি শুনলাম আমার বিয়ে হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে। রেণুর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। একমাত্র রইল তার দাদা। দাদাও রেণুর সাত বছর বয়সে মারা যান। তারপর সে আমার মার কাছে চলে আসে। আমার ভাই-বোনদের সঙ্গেই রেণু বড় হয়।’

গত শতকের ত্রিশের দশকের মধ্যেই স্বদেশি আন্দোলন দেখে ইংরেজবিরোধী মনোভাব জেগে ওঠে বালক শেখ মুজিবের মনে। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘চোখের চিকিৎসার পর মাদারীপুর ফিরে এলাম, কোনো কাজ নেই। লেখাপড়া নেই, খেলাধুলা নেই, শুধু একটা মাত্র কাজ, বিকালে সভায় যাওয়া। তখন স্বদেশি আন্দোলনের যুগ। ইংরেজদের বিরুদ্ধেও আমার মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হলো। ইংরেজদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আনতে হবে। আমিও সুভাষ বাবুর ভক্ত হতে শুরু করলাম।’

পরে কংগ্রেস-মুসলিম লীগ বিভাজনে মুসলিম লীগের প্রতি ঝুঁকে পড়েন শেখ মুজিব। সারাজীবন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনীতির ভক্ত ছিলেন। গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল, মিশনারি স্কুলে পড়াশোনার সময়ই রাজনীতির দীক্ষা হয়ে যায় শেখ মুজিবুর রহমানের।

১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জ সফরে এলে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় তার নেতৃত্বে। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আলাপ ওই সময়ই।

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘হক সাহেব পাবলিক হল দেখতে গেলেন। আর শহীদ সাহেব গেলেন মিশন স্কুল দেখতে। আমি মিশন স্কুলের ছাত্র। তাই তাকে সংবর্ধনা দিলাম। তিনি স্কুল পরিদর্শন করে হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চের দিকে চললেন, আমিও সঙ্গে সঙ্গে চললাম। তিনি ভাঙা ভাঙা বাংলায় আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন, আর আমি উত্তর দিচ্ছিলাম।’ ওই আলাপের পর শেখ মুজিবের নাম-ঠিকানা লিখে নেন সোহরাওয়ার্দী। পরে কিশোর মুজিবুর রহমানকে চিঠিও লেখেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। চলে পত্র যোগাযোগ।’

এর আগে স্কুলে পড়ার সময়ই ‘মুসলিম সেবা সমিতির’ সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান। সমিতির পক্ষ থেকে মুসলমান বাড়ি থেকে সংগৃহীত মুষ্টিভিক্ষার চালের অর্থ দিয়ে গরিব ছাত্রদের পড়ালেখাসহ অন্যান্য খরচের জোগান দেওয়া হতো।

এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আব্বা কাজী আবদুল হামিদ এমএসসি মাস্টার সাহেবকে আমাকে পড়ানোর জন্য বাসায় রাখলেন। তার জন্য একটা আলাদা ঘরও করে দিলেন। গোপালগঞ্জের বাড়িটা আমার আব্বাই করেছিলেন। মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করেন, যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন। মুষ্টিভিক্ষার চাল ওঠাতেন সব মুসলমান বাড়ি থেকে। যদি কোনো মুসলমান চাল না দিত আমার দলবল নিয়ে তার ওপর জোর করতাম। দরকার হলে তার বাড়িতে রাতে ইট মারা হতো। এজন্য আব্বার কাছে অনেক সময় শাস্তি পেতে হতো। আমার আব্বা আমাকে বাধা দিতেন না।’

১৯৩৯ সালে কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘১৯৩৯ সালে কলকাতা যাই বেড়াতে। শহীদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। আবদুল ওয়াসেক সাহেব আমাদের ছাত্রদের নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে আলাপ করে তাকে গোপালগঞ্জে আসতে অনুরোধ করি। শহীদ সাহেবকে বললাম, গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করব এবং মুসলিম লীগও গঠন করব। খন্দকার শামসুদ্দীন সাহেব এমএলএ তখন মুসলিম লীগে যোগ দেন। তিনি সভাপতি হলেন ছাত্রলীগের। আমি হলাম সম্পাদক।’

অল বেঙ্গল মুসলিম ছাত্রলীগের ফরিদপুর জেলা ও প্রাদেশিক কাউন্সিলরও হন তিনি। বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এক বছরের জন্য ১৯৪১ সালে। ওই বছরই তিনি দুবার সাময়িকভাবে গ্রেপ্তার হন।

১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন শেখ মুজিব। তার রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়তে থাকে। কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন ১৯৪৬ সালে। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই তিনি স্নাতক ডিগ্রি নেন।

ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন শেখ মুজিব। এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও পরে এটাই তার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি গড়ে দেয়।

তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।

তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং হয়ে যান বঙ্গবন্ধু। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতাণ্ডসংগ্রামের ডাক দেন, যা ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দি ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু কাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।

সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।

বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেওয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।

বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল কাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।

‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।’ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ৪ মার্চ নগরীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার জনগণের নেতৃত্বদান করেছিলেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলাদেশ সফরের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছিলেন। এ সময় মন্তব্য বইয়ে তিনি লেখেন, এই উপমহাদেশের প্রতিটি মুক্তিকামী, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্গবন্ধু,মহানায়ক,শেখ মুজিবুর রহমান
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close