reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর, ২০২২

অধ্যাপক ডা. রাশিদা পেলেন যুক্তরাজ্যের সম্মাননা

ছবি : সংগৃহীত

অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ ইউকে-এর সম্মাননা পেয়েছেন। অধ্যাপক ডা. রাশিদা চিকিৎসা পেশায় ও সমাজ কল্যাণে অনবদ্য অবদান রাখায় এ সম্মাননা পান। গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগমের হাতে রয়্যাল কলেজ অব ইউকে’র পক্ষ থেকে FRCOG সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।

জানা গেছে, তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার-এর চেয়ারম্যান। আন্তর্জাতিক বিশেষ সম্মাননা পাওয়ায় বিভিন্ন সংগঠন তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে।

কে এই ডা. রাশিদা? বিশিষ্ট ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের মরহুম আমজেদ আলী মাস্টারের কন্যা ও তিনি বিশিষ্ট শিল্পপতি ড. আতহার উদ্দিনের ছোট বোন। তিনি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) থেকে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগে এফসিপিএস পাস করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মকর থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের হুমায়ন রোডে ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। তার যোগ্য নেতৃত্বে বন্ধাত্ব দূরীকরণের এই প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করেছে।

ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় বাংলাদেশের অন্যতম পথিকৃৎ এবং ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আইসিআরসি) এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম।

জন্ম ও শিক্ষা : ১৯৫৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার বাসবুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৭৫ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ : ডা. রাশিদা বেগম ১৯৮২ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৯৪ সালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে ফেলোশিপ সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল শিক্ষায় ডিপ্লোমা করেন এবং ১৯৯৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় কাজ শুরুর পূর্বে ডা. রাশিদা বেগম যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর থেকে বন্ধ্যাত্ব এবং এসিস্ট্যাড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (এআরটি) বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৬ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডস থেকে ক্লিনিক্যাল ভ্রূণবিদ্যায় এমএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।

কর্মজীবন : ডা. রাশিদা বেগম স্নাতক সম্পন্ন করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চাকরি করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে চাকরি করার সময় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)- এ উত্তীর্ণ হন। তিনি ফেলোশিপ ট্রেইনিং শেষ করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। ডা. রাশিদা বেগম ২০০২ সালে ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আইসিআরসি) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দক্ষতার সাথে বন্ধ্যাত্ব এর চিকিৎসা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

২০০৩ সালে এসিস্ট্যাড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (এআরটি) নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। এখানে হাজারের অধিক দম্পতির সফলতার সাথে তিনি চিকিৎসা করেছেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে (আইসিআরসি) চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

গবেষণা : ডা. রাশিদা বেগম গবেষক হিসেবেও কাজ করছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ৮২টি জার্নালে তার খেলা প্রকাশ পেয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক বই লেখার পাশাপাশি তিনি ২০১৯ সালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে রোগীর ব্যবস্থাপনা সহায়ক একটি বই প্রকাশ করেন।

সম্মাননা ও অ্যাওয়ার্ড অর্জন : ২০০৫ সালে সেরা গবেষণার জন্য এশিয়া ওসেনিয়া ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি (এওএফওজি) থেকে ‘ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন। তিনি এই সম্মাননা লাভ করা বাংলাদেশের প্রথম স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। একই বছর নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘শাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড’ পান। ২০০৮ সালে দেশপ্রেমী সাংস্কৃতিক সংঘ ডা. রাশিদা বেগমকে ‘বেস্ট ফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে।

২০১০ সালে তিনি ‘হেলেন কেলার’ গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। ইনফার্টিলিটি চিকিৎসায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (ওজিএসবি) এই গুণী চিকিৎসককে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে।

তিনি ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডের ইউরোপিয়ান বিজনেস অ্যান্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত ‘রোজ অব প্যারাসেলসাস অ্যাওয়ার্ড’ এবং সাহেরা হাসান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পান।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ রয়েল কলেজ অব অবস্টেট্রিসিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট ২০২১ সালে ডা. রাশিদা বেগমকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ডা. রাশিদা বেগম,যুক্তরাষ্ট্র
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close