আবদুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ক্লোজআপ ওয়ানের সেই বাঁধন এখন ইউএনও

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার শেরপুর আফরোজগঞ্জ বাজারে চাঁদাবাজদের হামলার শিকার হয়েছেন খালিছ মিয়া (৩৫)। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরীকে নিয়ে গেলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় আইনানুগ পরামর্শ দিলেন। প্রতিদিন এভাবে তার কাছে আসেন একের পর এক সমস্যাগ্রস্ত নারী-পুরুষ। তিনিও ধৈর্য নিয়ে শুনেন তাদের সুখ দুঃখের কথা। কারো প্রতি নেই বিরক্তিবোধ, রূঢ় আচরণ। সারা দিন প্রশাসনিক কাজেই ডুবে থাকেন। তিনি আর কেউ না ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ সেরা দশের এক ফাইনালিস্ট দেশ কাঁপানো শিল্পী বাঁধন। সাবরিনা রহমান বাঁধন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

একজন জনবান্ধব প্রশাসনিক অফিসার। বলা যায়, তার প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কাজগুলো প্রশাসনের প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের বদ্ধমূল ধারণা পাল্টে দিচ্ছে। এক সময় যেখানে যেতে মানুষ ভয় পেত, সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এখন যেন অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল।

শিল্পী বাঁধনের জন্ম বনলতা সেনের নাটোরে। নলডাঙা উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী ঠাকুর লক্ষ্মীভোল গ্রামে। বাবা ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)। তিন বোন আর একমাত্র ভাইয়ের মধ্যে বড় বাঁধন শিক্ষা জীবনে ছিলেন অনেক মেধাবী। স্টার মার্ক পেয়ে ১৯৯৯ সালে রাজশাহী বোর্ড থেকে এসএসসি এবং সমান নম্বর পেয়ে ২০০১ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে এইচএসসি পাস করেন বাঁধন।

স্বপ্ন ছিল বড় ইঞ্জিনিয়ার হবেন। ভর্তি হন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করে ৩২তম বিসিএসে অংশ নেন। সুপারিশপ্রাপ্ত হন প্রফেশনাল ক্যাডারের সড়ক ও জনপদ বিভাগে। কিন্তু বাবার ইচ্ছা পূরণে ৩৩তম বিসিএসে অংশ নেন। অ্যাডমিনে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে প্রশাসনিক চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং চট্টগ্রাম কালেক্টোরেটে সহকারী কমিশনার পদে।

সাবরিনা রহমান বাঁধন জানান, নিজে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া স্বপ্ন দেখলেও বাবা চাচ্ছিলেন আমি প্রশাসনে যোগ দেই। তাই এই ক্যাডার পরিবর্তন। আর পিছু হঠতে হয়নি। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব থেকে ২০২১ সালের ১ জুন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগ দেন সাবরিনা রহমান।

প্রশাসনে যোগ দিলেও থেমে নেই তার লেখালেখি আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, গান গাওয়া, বই পড়া। লিখেন গল্প কবিতা উপন্যাস ও কবিতা। সাবরিনা রহমান বাঁধনের ‘শেষের কবিতা পরে’ কাব্যগ্রন্থ আর ‘কমলো মেঘের ওজন’ উপন্যাস। ২০২২ সালের বইমেলায় মোড়ক উন্মোচিত হয়।

মৌলভীবাজারে যোগ দিয়ে অনেক ভালো কাজের মধ্যে সব স্কুল-কলেজ মাদরাসার ১৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য আয়োজন করেছিলেন শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত প্রশিক্ষণ। মুজিববর্ষে তার ব্যতিক্রম আয়োজন চা বাগানে নিয়ে শিশুদের হাতে-কলমে আর্টক্যাম্প অনেক প্রশংসিত হয়। এ ছাড়াও উদ্যোক্তা নারীদের জন্য সপ্তাহে দু’দিন তাদের পণ্য বিক্রির জন্য চাঁদনীঘাটে চালু করেছেন হাট। শুধু শিক্ষার্থী ও শিল্পী হিসেবেই নয়, প্রশাসক হিসেবেও সেরাদের সেরা সাবরিনা রহমান বাঁধন।

প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। দেশের জন্য কাজ করতে পারছি।’ কখন খারাপ লাগে, জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, ‘আইনবহির্ভূত আবদার আর আইন প্রয়োগে বাধা সহ্য করতে পারি না।’ ফুটফুটে দুই ছেলের জননী সাবরিনা রহমান বাঁধনের স্বামী মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল জিয়াউদ্দিন আহমেদ। স্বামী সন্তানদের নিয়ে অনেক সুখী পরিবার বঁধনের।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঁধন,ইউএনও,মৌলভীবাজার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close