আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ০৮ মার্চ, ২০২২

নারীর নেতৃত্ব ও উন্নয়নে নিগার সুলতানার দৃষ্টান্ত

সামাজিক বৈষম্যহীনতা দূর করে নারীদের নেতৃত্ব ও কর্মমুখী করার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নিগার সুলতানা নামে এক নারী উদ্যোক্তা। পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের নেতৃত্ব স্থাপন ও কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর গ্রামের মরহুম আশরাফ উদ্দিন তারা মিয়ার মেয়ে নিগার সুলতানার কথা। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে নিগার সুলতানা সবার বড়। ছাত্র জীবন থেকে ছিলেন নারী নেতৃত্বের অধিকারী। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার অর্ন্তভুক্ত বর্তমানে পলাশ থানার আ.মীলীগের রাজনীতির মাধ্যমে নারী নেতৃত্বে আসেন তিনি। দায়িত্বে নেন থানা মহিলা আ.মীলীগের সাধারণ সম্পাদীকার। এর পর থেকে রাজনীতিতে নারীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নিরলশ কাজ করে যান তিনি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন করা, সামাজিক বৈষম্য দূরিকরণসহ সংগঠনকে গড়ে তুলেন মর্যাদাশীল।

সমাজের অবহেলিত নারী, শিক্ষিত বেকার ছাত্রী, হতদরিদ্র মহিলা ও বিধবা মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন নিগার সুলতানা। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও বেগম রোকেয়া দিবসে সমাজ উন্নয়নে অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানতা পান তিনি।

এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলা দর্পণ থেকে নারী উন্নয়নে বিশেষ অবদানে জন্য সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। নিগার সুলতানা কর্মমুখী নারী সৃষ্টির জন্য ২০১২ সালে নিজেস্ব অর্থ ও উদ্যোগে গড়ে তুলেন সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ নামে একটি সেচ্চাসেবি সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে বিনামূল্যে নারীদের দেওয়া হয় সেলাই প্রশিক্ষণ। এতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দারিদ্রতা জয় করেছে উপজেলার প্রায় দুই হাজার নারী। দারিদ্রতাকে জয় করে তারা আজ স্বাবলম্বী।

সুলতানায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কলেজ ছাত্রী আসমা বেগম, সুমি আক্তার, পারুল বেগম ও মোমেনা খাতুন জানান, এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা এখন ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারছি। নিজেদের লেখাপড়ার খরচ নিজেরাই চালাতে পারছি। এর ফলে পরিবারের কেউ এখন বোঁঝা মনে করে না।

চরসিন্দুর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা শাহানাজ ও সুমি আক্তার বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দু চোখে কিছুই দেখছিলাম না, সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ আমাদের নতুন করে বাঁচার পথ দেখিয়েছে। এখন কাপড় সেলাই করে আমাদের সংসার চলে।

চরসিন্দুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের গৃহবধূ হাবেজা বেগম জানান, তার স্বামী যে আয় করতো তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। প্রশিক্ষণ নিয়ে একন তিনি নিজেই সেলাই কাজ করে মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা আয় করছেন।

গজারিয়া ইউনিয়নের গৃহবধূ মরিয়ম জানান, লেখাপড়া শেষ না হতেই বিয়ে হয়ে যায়, তার পর স্বামী ও সংসার সামলাচ্ছিলাম, তবে ইচ্ছে ছিল নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার। সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমাদের সেই পথ দেখিয়েছে। তাদের মতো অনেকেরই এখন সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

২০১২ সালে ৯ ফেব্রয়ারি মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়ন থেকে এই সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণের যাত্রা শুর হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠাতা নিগার সুলতানা। তিনি বলেন, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে শিক্ষিত বেকার ছাত্রী, হতদরিদ্র মহিলা ও বিধবা মহিলাদের কি ভাবে স্বাবলম্বী করা যায় এই চিন্তা করে আমি ফ্রি সুলতানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করি। নিজেস্ব অর্থায়নে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অলস হাতকে কর্মীর হাত বানিয়েছি। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার নারীর হাতকে আমরা কর্মীর হাতে পরিণত করেছি। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে এর কার্যক্রম শেষ করে বর্তমানে পৌরসভায় বিভিন্ন মহল্লায় প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান। প্রতিটি ব্যাচে তিন মাস করে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে ৬ জন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

এছাড়া প্রশিক্ষনার্থীদের উদ্ধুদ্ব করতে কয়েকটি ব্যাচে শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষনার্থীকে সেলাই মেশিনও উপহার দেওয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা নিগার সুলতানা আরো বলেন, মানুষকে নিয়ে রাজনীতি সবাই করে, কিন্তু হতদরিদ্র বেকার নারী ও সাধারণ নারীদের নিয়ে অনেকেই চিন্তা করে না। আমার চিন্তা ছিল সাধারণ নারীদের জন্য কিছু করা। তাই আমার ছেলেকে নিয়ে এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পলাশ,নরসিংদী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close