মিজানুর রহমান, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি:

  ০৮ মার্চ, ২০২৩

নাকুগাঁও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নারী শ্রমিকরা

ছবি: নাকুগাঁও স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার নারী শ্রমিক।  মিজানু রহমান, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পাথর ভাঙার শ্রমিক রয়েছে দুই হাজারের অধিক, এদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। এসব নারী শ্রমিক রোদ বৃষ্টি এবং সমাজের কটুবাক্য ও উপহাস উপেক্ষা করে পাথর ভাঙার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু পাথর ভাঙার সময় সৃষ্ট ধুলিকনা তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। সর্দিকাশি শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাকুগাঁও স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকরা ক্রাশিং মেশিনে পাথর ভাঙা, নেটিং ও উত্তোলন কাজের সঙ্গে জড়িত। সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কাজ করে একজন শ্রমিক মজুরি পান ৩০০টাকা। নিত্যপণ্যের ক্রমাগত চড়া মূল্যের বাজারে পিষ্ট এসব রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুকিতে। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশায় স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়ার যেন সময়ই নেই তাদের। পাথর ভাঙার সময় চোখে মুখে নাকে প্রবেশ কওে পাথর ভাঙার কণা। শ্বাসকষ্ট, শরীরে ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তবে সুরক্ষা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

কথা হয় বন্দরের নারী শ্রমিক জরিনা খাতুনের সাথে। তিনি জানালেন, সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই তার। ছোট দুই ছেলে রেখে স্বামী মারা গেছে প্রায় দুই বছর আগে। থাকেন অন্যের বাড়িতে। উপজেলার কালিনগর এলাকা থেকে নাকুগাও স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজ করেন। যে মজুরি পান তা দিয়েই ছেলে দুটোকে নিয়ে কোনমতে টিকে আছেন। তিনি বলেন, ছেলে দুইটাকে তিনমাস ধরে মাছ খাওয়াইতে পারি না। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।

নারী শ্রমিক নফুজা খাতুন বলেন, আমার বেডান (স্বামী) মারা গেছে কয়েক বছর আগে। বাধ্য অইয়াই পাথর ভাঙি। যে ট্যাহা পাই, তা দিয়েই সংসার চালানোই দায়। ধুইল্লার (ধুলো) লাইগ্যা চোখ জ্বালাপোড়া করে, ঠান্ডা কমে না।

আরেক নারী শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন, আমরা সীমান্ত এলাকার মানুষ। আর কোনো কাম কাজ নাই। পাথর ভাঙা খুব কষ্টের কাম, সংসারে অভাব তাই করতেই অয় (হয়)।

পাথরের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম জানান, শুধু শ্রমিক কেন, আমরা নিজেরাও তো ঝুঁকির মধ্যে আছি। ধুলো বালি নাকের ভেতরে গেলে ঠান্ডা লাগে। সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।

বন্দরে লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আলম মিয়া বলেন, পাথর ভাঙার কাজের সময় শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছেনা। তবে এবিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, দ্রব্যমূলের যেভাবে দাম বাড়ছে। সে হিসেবে শ্রমিকদের মজুরিও বাড়ানো দরকার।

আদিবাসী নারী নেত্রী ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, শরীওে ব্যাথা। স্থানীয় কেমিস্ট ও পল্লি চিকিৎসকের কাছে বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খাই। সাময়িক সুস্থ হয়ে আবারও পাথরের কাজে নেমে পড়ি।

জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক সাবিহা জামান শাপলা বলেন, ক্রাশিং মেশিনে পাথর ভাঙা, নেটিং, শোটিং ও উত্তোলন কাজের সঙ্গে জড়িত যারা, তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি মালিকপক্ষের উচিত শ্রমিকদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। মাসে অন্তত দুই থেকে তিনবার বন্দরে মেডিকেল ক্যাম্প করা দরকার। তা না হলে এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক পাথর শ্রমিক সর্দি-হাঁচি-কাশিসহ দীর্ঘমেয়াদী রোগের আশঙ্কা রয়েছে।

সিভিল সার্জন ডাক্তার অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, যারা ক্রাশিং মেশিনে পাথর ভাঙার কাজ করেন, তাদের শরীরের শোষণযন্ত্রে ডাস্ট প্রবেশ করতে পারে। সেজন্য আমরা মাস্ক পড়ে কাজ করার পরামর্শ দেই।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নারী শ্রমিক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close