মোস্তাফিজ, তালতলী (বরগুনা)

  ০৮ মার্চ, ২০২৩

বড়শিতেই ৪০ বছর

বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়ায় স্লুইসগেটের কাছে আন্ধারমানিক নদীতে বড়শি ফেলে মাছের জন্য চার বোনের অপেক্ষা - মোস্তাফিজ 

'বাবার শ্বাসকষ্ট ছিল। রোজগার করে ভরণপোষণ করতে পারতেন না। প্রায়ই ঘরে খাবার থাকত না। পেটের দায়ে সেই ছোট বেলা থেকেই আমরা চার বোন খালে বিলে মাছ ধরাকেই জীবনের ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছি। কখনো হাত দিয়ে, কখনো বড়শি দিয়ে, আবার কখনো জাল দিয়ে মাছ ধরছি। অনেক কষ্টে করে জীবন কাটছে।

কথাগুলো বলেছিলেন জরিনা বেগম। তিনি বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়া এলাকার হাচেন মোল্লার মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই বরশি দিয়ে মাছ ধরে চলছে তার জীবন সংগ্রাম। তারা পাঁচ বোন ও এক ভাই। তাদের মধ্যে চার বোন জরিনা, ফাতেমা, হালিমা, রাহিমা আন্ধারমানিক নদীতে কখনো বরশি ফেলে, কখনো জাল টেনে মাছ ধরেন। সেই মাছ বিক্রি করেই চলছে তাদের সংসার।

নিওপাড়া এলাকায় গেলে দেখা যায়, মাছ পাওয়ার আশায় রোদ উপেক্ষা করে স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে চারটি নৌকায় বসে বড়শি ফেলেন চার বোন। কারো বড়শিতে চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, বোয়াল আবার কারো ধরা পড়ছে কোড়াল, রুই, পাঙাশসহ নানা প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বাজারে নিলে ৩শ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে কখনো কখনো খালি হাতেও ফিরতে হয়।

কথা হলে চার বোন জানান, নদীতে মাছ থাকলে তাদের সংসারের সব সদস্যর পেটে ভাত জোটে। আর মাছ না থাকলে পেটে ভাত জোটে না। তবু সংসার চালাতে প্রায় ৪০ বছর যাবত বড়শির ছিপ ধরে আছেন তারা। বিয়ের পরও একই রকম রয়ে গেছে চার বোনের জীবন। সরকারি আবাসন প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ ছাড়া জীবনে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি তাদের। এর কারণ হিসেবে জরিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাবার তেমন ভিটে মাটি, অর্থ-সম্পদ ছিল না। বিয়ে দিয়েছে তাও গরীব বাড়িতে, বয়স্ক রোগাক্রান্ত স্বামী, কাজ করতে পারে না। বড়শি দিয়ে আমি মাছ ধরে যা আয় রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়।'

আরেক বোন রাহিমা বেগম বলেন, ‘ছোট সময় থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরি। প্রথমদিকে রাতে রাতে মাছ ধরতাম। পরে পেটের টানে দিনেও মাছ ধরা শুরু করেছি। মানুষে লজ্জা দিত এই বলে যে, মহিলা মাছ ধরে। কিন্তু আমাদের উপায় নাই। মাছ ধরতে পারলে খেতে পারি, আর মাছ না পেলে না খেয়েই থাকতে হয়। এভাবেই চলতেছে আমাদের জীবন।'

তিনি আরো বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরি। কিন্তু যারা কোনদিনও মাছ ধরেনি তারাও জেলে কার্ডের চাল পায়। রাতদিন মাছ ধরেও আমরা চাল পাই না।'

চার বোনকে নিয়ে তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘নারী থাকায় এদেরকে জেলে তালিকাভুক্ত করতে পারছি না। তবে এরা গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রণোদনার মাধ্যমে যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর মধ্যে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বরশি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close