নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আন্তর্জাতিক সিডও দিবস শনিবার

আজও শেষ হয়নি নারীর লড়াই

বাংলাদেশে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন নীতিমালা আছে যেমন, তেমনি এসব হাতিয়ার প্রয়োগে অনীহাও আছে। নারী আন্দোলন নেত্রীরা বলছেন, আশির দশকে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) শর্ত দিয়ে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সেটা আরও প্রকট হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে নারী অধিকার আন্দোলন এগিয়ে গেলেও নীতি নির্ধারকদের কারণেই বারবার পিছিয়ে পড়তে হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আজ আন্তর্জাতিক সিডও দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সনদটি কার্যকর হতে শুরু করে। এরপর থেকেই এই সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো প্রতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সিডও দিবস হিসেবে পালন করে।

জাতিসংঘের যে সাতটি সনদকে মৌলিক মানবাধিকার চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, ‘শুধু নারীসংক্রান্ত’ এই সিডও সনদ তার মধ্যে একটি। বাংলাদেশ এই সনদ অনুমোদন করে ১৯৮৪ সালের ৬ নভেম্বর। অনুমোদনকালে বাংলাদেশ সরকার ২, ১৩ (ক) এবং ১৬.১ (গ) ও (চ) ধারাগুলো আপত্তিসহ স্বাক্ষর করে। পরে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত রিভিউ কমিটির সুপারিশক্রমে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ১৩ (ক) ও ১৬.১ (চ) ধারা থেকে বাংলাদেশ তার আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়। তবে ধারা ২ এবং ১৬.১ (গ) থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়টি সরকার এখনও প্রক্রিয়াধীন।

সিডও সনদের ২ নম্বর ধারায় নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপের জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং বৈষম্যমূলক আইন থাকলে তা বাতিল করতে বলা হয়েছে। এই ধারাটি রোধ করে রাখাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশি কবীর বলেন, যে দুটি ধারায় রহিতকরণ জারি করে রাখা হয়েছে, তার মধ্যে ২ নম্বর ধারাটি আমাদের সংবিধানেই রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন না করা আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সিডও পরবর্তীতে নারী উন্নয়ন নীতিমালা হলেও তার বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। আবার নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে বলে যে বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল, সেটাও আমরা বাস্তবায়ন হতে দেখিনি। ফলে সব মিলিয়ে আসলে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে কেউ যে খুব সতর্কভাবে কাজগুলো করার চেষ্টায় আছে, সেটা আমার মনে হয় না।

অন্যদিকে ১৬.১ (গ) ধারায় বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে, যা নারীর পারিবারিক জীবনের মূল নিয়ন্ত্রক। সিডও সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতি বছর ৩ সেপ্টেম্বরকে সিডও দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে সনদটি সামনে আনা হয়েছিল সেটির প্রাণ এই দুটি ধারা। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের ভেতরে এক ধরনের এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। ২ নম্বর ধারা আমাদের সংবিধানে আছে। সিডওর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটা নারীর প্রজনন অধিকার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা বলে। ধারা যেগুলো মেনে নিয়েছে, সেটা অনুযায়ী রাষ্ট্র আইন করবে, কতটা বাস্তবায়ন করতে পারলো আন্তর্জাতিক কমিটির কাছে তার নিয়মিত প্রতিবেদন দেবে। এর মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা তৈরি হবে, সেই জায়গা থেকে এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে চাওয়ার অঙ্গীকার দেশ ও রাষ্ট্রের চাহিদার মধ্যে থাকতে হবে। নারী আন্দোলন শেষ হওয়ার নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এসব বাধা পার করেই যতটা এগিয়েছি আমরা। ফলে আগামীতেও এটা জোরদার রেখে, ধারা দুটো গ্রহণের দাবি নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আন্তর্জাতিক,সিডও দিবস,নারীর লড়াই
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close