মো.রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সরেজমিন গাজীপুর বিআরটিএ

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনে গলাকাটা বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ

সাদা শার্ট পরিহিত দালাল (বামে) জিন্নাত ও বিআরটিএ’র কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার (ডানে)।

গাজীপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে গ্রাহকদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। নিয়ম মেনে আবেদন করলেও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত দালালের মাধ্যমে টাকা দিলে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিসে’ সব কাজ দ্রুত হয়ে যায়।

এই ঘুষ বাণিজ্যের মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে বিআরটিএর মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ারের নাম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরাসরি গ্রাহকদের হয়রানি করেন এবং দালালদের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করেন।

সম্প্রতি গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয় থেকে মালিকানা পরিবর্তন করা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তিনি নিজে গিয়ে মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করলে কাগজপত্রে ত্রুটি দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে দালাল জিন্নাতের মাধ্যমে ৩,৫০০ টাকা দিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।

আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, গাজীপুর-থ-১২-২৯৩০ নম্বরের একটি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য তিনি প্রথমে নিজে চেষ্টা করেন, কিন্তু নানা সমস্যার অজুহাতে তার আবেদন আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু দালাল জিন্নাতের মাধ্যমে ৩,৫০০ টাকা দিলে সহজেই কাজ হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, জানুয়ারি মাসে গাজীপুর বিআরটিএ অফিস থেকে অন্তত ৭৫টি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে, যার প্রতিটির ক্ষেত্রে ৩,৫০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর-দ-১১-০০৭৮, গাজীপুর-থ-১২-১১৮৮, গাজীপুর-থ-১১-৫৯২৯, গাজীপুর-থ-১২-২৪৯০ নম্বরের গাড়িগুলোর মালিকানা পরিবর্তনে সরাসরি ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোলাম সারোয়ার টাঙ্গাইল বিআরটিএ অফিস থেকে বদলি হয়ে গাজীপুরে আসেন। গাজীপুরে যোগদানের পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বিআরটিএর আলোচিত কর্মকর্তা মাসুদের আত্মীয় হওয়ায় তিনি যেখানে যান, সেখানেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যান।

টাঙ্গাইলে থাকাকালীন তিনি মোটরযান পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) দায়িত্ব পালন করেন, যদিও তার পদের সঙ্গে এ দায়িত্বের সম্পর্ক নেই। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলার আসামি আলতাব হোসেনের সঙ্গে মিলে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যান।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলতাব হোসেনের বিরুদ্ধে ৩.৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা হয় এবং আরও ২.৭৫ কোটি টাকার সম্পদ গোপনের অভিযোগে দুদক পৃথক মামলা দায়ের করে। তবে রহস্যজনক কারণে গোলাম সারোয়ার তখন রেহাই পান।

সম্প্রতি একটি গোপন ভিডিওতে দেখা যায়, গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠে ফিটনেস করতে আসা গাড়ির ছবি তুলতে যান গোলাম সারোয়ার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দালাল জিন্নাত। মাঠে উপস্থিত একাধিক গ্রাহক জানান, দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিলে সহজে কাজ হয়ে যায়, তাই তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়েই ঝামেলা এড়ান।

বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই এসব দুর্নীতি চলছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সূত্র জানায়, অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এডি কে ম্যানেজ করেই গোলাম সারোয়ার এই ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে গোলাম সারোয়ারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে এডির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পাশাপাশি, তিনি প্রতিবেদককে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন।

অভিযোগের বিষয় গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) (এডি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে একাধিকবার ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গাজীপুর,টঙ্গী,গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন,বিআরটিএ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close