গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
কনকনে শীতেও বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সিরাজগঞ্জের কৃষকরা

ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া, কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোরো চারা রোপণে মেতে উঠেছেন সিরাজগঞ্জের কৃষকরা। নারী-পুরুষ সবাই এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জমিতে পানি দেয়া, চাষ করা, আগাছা পরিষ্কার, মই টেনে জমি সমান করা, সার দেওয়াসহ বীজতলা হতে চারা তোলার কাজে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া ভালো থাকায় জেলায় এবার বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জিরা শাইন জাতের ব্রি-২৯, ব্রি-৫৮, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮১, ব্রি-৮৪, ব্রি-৮৬, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯ ধানসহ অন্যান্য জাতের ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কেউ তীব্র শীত উপেক্ষা করে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমা করছেন। আবার কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে জমি তৈরি করছেন। আবার কোথাও কোথাও কৃষকরা তাদের তৈরিকৃত জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। কোথাও গভীর অথবা অগভীর সেচযন্ত্র দিয়ে জমিতে পানি তুলছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতায় মাঠে নামতে তাদের কষ্ট হচ্ছে শীত একটু কমে গেলেই কৃষকরা পুরো দমে নেমে যাবে মাঠে। সেই হিসেবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে শতভাগ জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে ধারণা করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে তারা বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন। বোরে চাষিরা যেন সঠিকভাবে ফসল চাষাবাদ ও পরিচর্যা করতে পারে, সে দিকে লক্ষ রেখে কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মাঠে গিয়ে সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
তাড়াশ উপজেলার বস্তুল গ্রামের কৃষক আয়নাল হক জানান, এবছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ মণ ধান হবে। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের দাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, চলতি মৌসুমে ১১’শ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হচ্ছে। উপজেলার সকল কৃষকদের বোরো ধান চাষে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির রোপণ কাজ শেষ হবে। রোপণ শেষ হলে পরবর্তীতে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য আলোক ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতি স্থাপন করা হবে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ধান আবাদ হবে বলে তিনি আশা করেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহিদ সরকার বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় ইতোমধ্যেই ইরি বোরো চাষাবাদে জেলার বিভিন্ন স্থানে জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা লাগানো শুরু হয়েছে। বিশেষ করে এ জেলার ইতোমধ্যেই ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা লাগানো হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এ চাষাবাদ পুরোদমে শুরু হবে এবং এ চাষাবাদে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।
পিডিএস/এমএইউ