ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

ঝিনাইদহে শিক্ষকের বদলী নিয়ে তোলপাড়

ডেপুটেশন না বদলী জানেন না শিক্ষা কর্মকর্তা

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বদলী নিয়ে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই শিক্ষকের নাম শামিমা সুলতানা দুলি। তিনি উপজেলার কাপাশহাটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

১ জানুয়ারি থেকে উপজেলার ভালকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মৌখিকভাবে ওই শিক্ষককে ডেপুটেশন দেয়া হয়েছে। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুবীর কুমার ঘোষ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অর্থের বিনিময়ে ওই শিক্ষককে ডেপুটেশন দেন। তবে ডেপুটেশন না বদলী কিভাবে তাকে ওই বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ শিক্ষা কর্মকর্তা।

শিক্ষকদের সাথে দ্বন্দ্বের কারনে হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষককে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা। চলমান অষ্টম শ্রেণি চালু থাকলেও শিক্ষক দ্বন্দ্ব ও শিক্ষার্থী সংকটসহ নানা কারনে অষ্টম শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে স্কুলটির একজন শিক্ষিকাকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মৌখিক ভাবে ডেপুটেশন দিয়েছেন হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। নেই শিক্ষা বিভাগের তদারকি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়েই কাপাশহাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামিমা সুলতানা দুলি গত বছরের (২০২৪) মার্চ মাস থেকে ডেপুটেশনে যান ভালকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর আবার ডেপুটেশন দেওয়া হয় সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে আবার ডেপুটেশন দেয়া হয় কেসমত মান্দারতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত বছর ওই শিক্ষককে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন দেয়া হয়।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তারের মৌখিক নির্দেশে তাকে ডেপুটেশনে (প্রেষণে) দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিছুই জানেন না ।

নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থী অনুপাতে ভালকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক থাকার কথা। তবে বর্তমানে স্কুলটিতে ৭ জন শিক্ষক রয়েছে। আর কাপাশহাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক কম থাকায় পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমতি না নিয়ে শামিমা সুলতানা দুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বিধি ভঙ্গ করে ১ জানুয়ারি থেকে মৌখিক ভাবে ডেপুটেশনে (প্রেষণে) যান।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুবীর কুমার অর্থের বিনিময়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তারকে ম্যানেজ করে ওই শিক্ষককে ভালকী বিদ্যালয়ে পাঠান।

এর আগে শামিমা সুলতানা দুলিকে উপজেলার সোহাগপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কেসমত মান্দারতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন দেয় উপজেলা শিক্ষা অফিস।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডেপুটেশনে চলে যাওয়ায় ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ কাপাশহাটিয়া স্কুলের নামেই শামিমা সুলতানা দুলি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কোন নিয়মে শামিমা সুলতানা দুলি নামের ওই শিক্ষককে ডেপুটেশন দেয়া হয়েছে তা জানাতে পারেনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে কাপাশহাটিয়া বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

ভালকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আপাতত বিদ্যালয়ে কোন শুন্য পদ নেই। শামিমা সুলতানা দুলি নামের ওই শিক্ষকের ডেপুটেশনের বৈধ কোন কাগজ পত্রও নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিস মৌখিকভাবে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে।

এদিকে হরিণাকুন্ডুতে একাধিক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। শুন্য পদের বিদ্যালয়গুলোতে ডেপুটেশন না দেওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেয়া দিয়েছে।

কাপাশহাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কাছে শামিমা সুলতানা দুলির ডেপুটেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৌখিকভাবে ডেপুটেশন দিয়েছেন। কতজন শিক্ষক আছেন জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) হাসান মাসুদ বলেন, মৌখিক নির্দেশে শামিমা সুলতানা দুলিকে ভালকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার ওই শিক্ষককে মৌখিক ডেপুটেশন দিয়ে ঢাকায় বদলী হয়ে যান।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, আগের শিক্ষা কর্মকর্তা মৌখিক ভাবে তাকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ঢাকায় বদলি হয়ে যান তিনি। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভালকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, শামিমা সুলতানা দুলি নামের শিক্ষিকাকে ভালকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন দেয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।

খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডেপুটেশনের কোন সুযোগ নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু,সহকারী শিক্ষকের বদলী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close