গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
নাব্য সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না জাহাজ
নাব্যতা সংকটে বাঘাবাড়ী নদীবন্দর প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এই বন্দর থেকে উত্তরবঙ্গে সার, তেল, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় নির্মিত হয় নদী বন্দরটি। বর্তমানে নাব্যর অভাবে শুষ্ক মৌসুমে মালবাহী জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে মালবাহী জাহাজগুলো। জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না পারায় বেকার হয়ে পড়েছে এখানকার শ্রমিকেরা।
বাঘাবাড়ী ঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, শুষ্ক মৌসুমে ৭-৮ ফুটের বেশি ড্রাফট লোড নিয়ে এ বন্দরে কোনো নৌযান ভিড়তে পারে না। সারবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ ফুট ড্রাফট লোড নিয়ে চলাচল করে (পানির সমতল থেকে নৌযানের তলার দূরত্ব অর্থাৎ একটি নৌযানের তলা পানির যতদূর নিচে যায় তাকে ড্রাফট বলে)।
বাঘাবাড়ীর বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এই নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার সময় নৌযানের আকার ছোট ও পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত কম ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নৌযানের আকার ও ধারণক্ষমতা বাড়লেও বন্দরের আধুনিকীকরণ হয়নি। বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের শ্রমিক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একসময় এই বন্দরে ৪০০-৫০০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে কাজ না থাকায় এখন অনেকেই বন্দর ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকেছেন। এখন ১০০-১৫০ জন শ্রমিক থাকলেও তাদের আয় যথেষ্ট নয়।
বন্দরে সার পরিবহন প্রায় বন্ধ থাকায় বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) গুদামে এখন সার আনা হচ্ছে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে। তবে সেগুলোও সময়মতো পৌঁছায় না বলে অভিযোগ গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আনসারীর। তিনি আরও বলেন, জানুয়ারিতে সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০ হাজার ২৮১ টন সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মজুত রয়েছে সাত হাজার ৭৩৪ টন সার। শুধু এই সার না, শুষ্ক মৌসুমে বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল পরিবহনেও সংকট তৈরি হয়।
বাঘাবাড়ী বন্দরে অবস্থিত যমুনা তেল ডিপোর কর্মকর্তা আবুল ফজল বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে ঝুঁকি থাকায় তাদের আট থেকে নয় লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে হচ্ছে।
বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর ছিল। এই বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে একটি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা দূর হবে।
পিডিএস/এমএইউ