গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী ও সাহারুল হক সাচ্চু, সিরাজগঞ্জ
মা-বাবা হারানো দুই শিশুর কান্নায় ভারি বাখুয়া গ্রামের বাতাস
বাবা-মা হারানো দুই নাবালক শিশু কান্নায় ভাড়ি হয়ে উঠেছে বাখুয়া গ্রামের বাতাস। আর তাদের আর্তচিৎকারে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে বৃদ্ধ দাদা-দাদি সহ প্রতিবেশিরা। শত চেষ্টাতেও থামছে না সুমী আর সুবর্ণার অশ্রু বিসর্জন ।
উল্লাপাড়া উপজেলার বাকুয়া ইউনিয়নের ছোটো বাখুয়া মিলপাড়া গ্রামের বাবা মায়ের আদর স্নেহ হতে চিরবঞ্চিত এই দুই শিশুর জীবন-জীবিকা কেমন করে চলবে, কে নেবে তাদের লেখাপড়া, অন্নবস্ত্র বাসস্থানের দায়িত্ব। এ ভাবনা কেবল এখন তাদের দাদা-দাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; ছড়িয়ে পড়েছে তাদের প্রতিবেশীসহ গ্রামের সবার মাঝে।
প্রতিবেশী আঃ মজিদ, হাসনা বেগমসহ অন্যান্যরা জানান, উল্লেখিত গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে শুকুর আলী (২২) পেশায় ছিল অটোরিকশা চালক। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন যা রোজগার করতো তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলতো তাদের সংসার। আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় সে যখন মারা যায় তখন বড় মেয়ে সুমি খাতুনের বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর। স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী শিরিনা খাতুন ছোট মেয়ে গর্ভে নিয়েই অপরের বাড়িতে কাজ করে সন্তানকে নিয়ে বহু কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন। প্রতিবেশি অপর একজন জানান, ছোট মেয়ে সুবর্ণা মায়ের গর্ভে থাকাকালে তার বাবা মারা যায়। আর জন্মের পর ১১ মাসে সে হারায় মা শিরিনা খাতুনকে।
তার প্রতিবেশিরা জানান, মৃত স্বামী-স্ত্রীর আড়াই শতক জায়গা ছাড়া জমিজিরাত আর কিছুই নেই। ওইটুকু জমিতেই ছোট একটি ঘর তুলে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করত মৃত শুকুর আলী। চলতি মাসের ২ ডিসেম্বর সোমবার শিরিনা খাতুন তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনিও ইহত্যাগ করেন বলে পরিবারের লোকজন জানান। ওই দিন রাতেই তাকে নাগরৌহা গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মা-বাবা হারানো দুই শিশুর দাদা কুরমান আলী বলেন, পিতামাতা হারা বংশের এদের কিভাবে লালন-পালন করব তা ভেবে কুলকিনারা করতে পারছি না। কারণ আমি নিজেও একজন দিনমজুর ও আমার স্ত্রী মিলের শ্রমিক। আমাদের দুইজনের সামান্য রোজগারে কোনো রকম দিনাতিপাত করছি। এর মধ্যে আমার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন এই অসহায় নাতনি দুটোকে লালন পালন করব কিভাবে, তা নিয়ে ভেবে কিনারা পাচ্ছি না।
এব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো কোনো খবর পাইনি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডে শিশুদের অভিভাবকরা আবেদন করলে শিশু দুটিকে বেবি হোমে লালন-পালনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরবর্তীতে সরকারি শিশু পরিবারে স্থানান্তর করে তাদের লেখাপড়াসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান। অথবা কেউ দত্তক নিতে চাইলে তাদের অবিভাকদের সন্মতিক্রমে দত্তক দেয়া যেতে পারে।
পিডিএস/এমএইউ