সিলেট (ফেঞ্চুগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

আজ ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত দিবস

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

আজ ১১ ডিসেম্বর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ফেঞ্চুগঞ্জের সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বক্ষণে ফেঞ্চুগঞ্জ ও হাকালুকি হাওরে মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকসেনাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়। একই সঙ্গে ফেঞ্চুগঞ্জের সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে পাকসেনাদের বাংকারে গোলাবর্ষণ করতে করতে বাংকার অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ লড়াইয়ে পূর্ণাঙ্গ সফলতা লাভ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্মরণকালের এ লড়াইয়ে বিপুলসংখ্যক পাক সেনা নিহত হয়। জীবিত অবস্থায় অস্ত্রসহ অনেক পাকবাহিনীকে ধরে ফেলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধের দাবানলের সূচনালগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তৎকালীন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মরহুম আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ ফেঞ্চুগঞ্জ থানা থেকে অস্ত্র নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে পাহারা বসানো হয়। ফেঞ্চুগঞ্জের কৃতি সাহসী যোদ্ধা মরহুম সৈয়দ মকবুল আলী, শহীদ ডা. ফয়েজ মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া, কমান্ডার আজমল হোসেন রউফ সহ কয়েকজন পাহারায় অংশ নেয়।

এরই মধ্যে কয়েকজন সাহসী যোদ্ধা পাকসেনাদের ফেঞ্চুগঞ্জ আগমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে ফেঞ্চুগঞ্জ ইলাশপুর রেলওয়ে ব্রিজে ডিনামাইট চার্জ করেন। বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সিলেট শহর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ আসার রেলপথ।

১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে দল বেঁধে ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকা প্রবেশ করে ফেঞ্চুগঞ্জ পশ্চিম বাজারের ‘কাইয়ার গুদামে’ আস্তানা গড়ে পাকবাহিনী।

শুরুতেই রাজাকারদের সহায়তায় ফেঞ্চুগঞ্জ ইসলামপুর গ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম হাজী আছকর আলীর বাড়িতে হানা দেয়। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে কুখ্যাত রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা মরহুম আছকর আলীর ছেলে তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মী আছাদুজ্জামান বাচ্চুকে ধরে নিয়ে যায়। এ ছাত্রনেতা আর ফিরে আসেনি পাক জল্লাদদের হাত থেকে। বিভিন্ন জনের ভাস্যমতে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ফেঞ্চুগঞ্জের প্রথম শহীদ আছাদুজ্জামান বাচ্চু।

পাকবাহিনী ‘কাইয়ার গুদাম’ জল্লাদখানা তৈরি করে ফেঞ্চুগঞ্জের অসংখ্য নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে নারীদের উপর৷ মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রউফ, গণকবি মফজ্জিল আলীসহ কয়েকজন জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী তারা কাইয়ার গুদামে গিয়ে যে নির্মমতার চিহ্ন দেখেছেন তা আজও মুখে আনতে ভয় হয়। কাইয়ার গুদামের মেঝেতে হাটলে আঠালো রক্তে পা আটকে যেত! খাড়ু সমান রক্ত জমাট ছিল জল্লাদখানার ভিতরে! পাক সেনারা এটা ব্যবহার করার সময় মানুষের রক্ত নিস্কাসনের জন্য ড্রেন করেছিল!

স্থানীয়দের চরম ক্ষোভ ও আক্ষেপ

স্বাধীন অর্জনের অর্ধশত বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত বধ্যভূমি কাইয়ার গুদামের ভেতরের দৃশ্য কেউ দেখতে পারেন নি। কাইয়ার গুদামের সামনের অংশ সরকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ও একটি মামলার কারণে ভেতরের দিকটা তালাবদ্ধ ও লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে। কাইয়ার গুদামকে স্বাধীনতার স্মৃতি হিসাবে উন্মুক্ত করে সংরক্ষণ করার দাবি স্থানীয়দের। সে দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কাইয়ার গুদাম বধ্যভূমির সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন, কিন্তু কাইয়ার গুদাম মূল অংশের মীমাংসা আজও হয় নি।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফেঞ্চুগঞ্জ,বধ্যভূমি,হানাদার বাহিনী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close