মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী
বাধায় আটকে আছে নীলকমলের পুর্নখনন
ফসলি জমি দাবি
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ঘেঁষে বয়ে গেছে ভারত থেকে নেমে আসা ছোট্ট নদ নীলকমল এখন মরা খাল। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে শুকিয়ে যাওয়া এর বুকে চাষাবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখন নীলকমলকে ফসলি জমি দাবি করে সরকারের পুনর্খনন প্রকল্প আটকে দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। চুক্তি অনুযায়ি নদটি খনন শুরু করতে গিয়ে কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদার। খনন কাজ পুরোপুরি বন্ধের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালনও করছে দখলদারেরা।
এদিকে উপজেলার ঐতিহ্যের অংশ নীলকমল দখল-দুষণে হারিয়েছে তার রূপ। নদের বুক জুড়ে চাষাবাদের পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে পানি প্রবাহ। নীলকমলকে দখল-দূষণমুক্ত করে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবিও অনেকের।
- নদটি খনন শুরু করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধায় কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদার
- খনন কাজ পুরোপুরি বন্ধের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালনও করে দখলদার ও চাষিরা
- সাড়ে ৩০ লাখ টাকায় নদের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পুনর্খননের উদ্যোগ বিএমডিএর
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ধাপে ধাপে পুনর্খনন করা হবে নীলকমল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এরই মধ্যে ৩০ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩০ টাকা ব্যয়ে নদের ৮০০ মিটার অংশ পুনর্খনন বাস্তবায়নের জন্য রাজশাহীর ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান মেসার্স নওশাদ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি করেছে। তবে চুক্তি মোতাবেক নদ খনন করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত নীলকমল নদটি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে মিলিত হয়েছে ভারত থেকে নেমে আসা আরেক নদী ধরলার সঙ্গে। নদটি আগে প্রবাহিত হতো সাবেক ছিটমহল দাশিয়ার ছড়ার পাশ দিয়ে। কিংবদন্তি আছে, এক সময় এ নদে নীলপদ্ম ফুটতো, সেই থেকে এর নাম হয় নীলকমল। লোকমুখে এখন নদটি নীলকোমর নামে রূপান্তরিত হয়েছে। শুধু নাম নয়, সময়ের সঙ্গে নীলকমল পাল্টেছে তার চলার পথ।
এদিকে দাসিয়ার ছড়ায় নীলকমল এখন মরা খাল। মরা খালে রাশি রাশি নীলপদ্ম ফুলের বদলে এখন বর্ষায় জমে থাকা পানিতে জন্মে কচুরিপানা। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে শুকিয়ে যাওয়া নদের বুকে চাষাবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তখন নীলকমলকে দেখে মনে হয় কৃষকের ফসলি জমি।
এদিকে দীর্ঘদিন পরে নীলকমল পুনর্খননের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তুনীলকমলকে ফসলি জমি দাবি করে খনন কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখার পক্ষে স্থানীয় আমতলা বাজারে মানববন্ধন করছেন স্থানীয়রা। নদ এলাকার কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার জমিতে বোরো মৌসুমে বীজতলায় চারা উৎপাদন করে আবাদ করি। এই জমি যদি খনন করা হয়, তাহলে আমরা এলাকার মানুষ একবারে নিঃস্ব হয়ে যাব।’
কৃষক মোবারক আলী বলেন, ‘আমরা এখানকার জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। খননের ফলে হাজার হাজার একর জমি আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই আবাদী কৃষি জমি যেন খনন করতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছি।’
কুড়িগ্রাম বিএমডিএ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. এজাদুল ইসলাম বলেন, ‘নীলকমল সরকারি খাল। খালটি পুনর্খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নীলকমলের পাঁচ কিলোমিটার খননের জন্য কার্যাদেশ জারিও করা হয়েছে। খালের বিভিন্ন অংশ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা ভোগদখল করে আসছেন। যারা এতদিন খালটি দখলে রেখেছেন তারাই খনন কাজে বাধা দিয়েছেন। আমরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয়দের সঙ্গে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে নীলকমলের পুনর্খননের কাজ শুরু করব।’
নীলকমল পুনর্খননের বিষয়ে নদীবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘নীলকমল অনেক পুরনো একটা নদ। আরএস রেকর্ডেও নদ, বর্তমান রেকর্ডেও নদ। নদটা এটা টিকিয়ে রাখাটা সরকারের একটা বড় দায়িত্ব। জীববৈচিত্র্য পরিবেশ সবকিছু রক্ষার জন্য নদ বাঁচাতে হবে। আমরা মনে করি সরকার জনস্বার্থে সে দায়িত্ব পালন করবে।’