মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক
দোকান ছাড়ছেন না ব্যবসায়ী, বন্ধ সড়ক সম্প্রসারণের কাজ
আদালতের নির্দেশও উপেক্ষিত
মেহেরপুরের গাংনীতে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বাসস্টেশন মোড়ে জেলা পরিষদের যাত্রীছাউনি ছাড়ার জন্য ভাড়াটিয়ার মৌখিক, লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেষে আদালত ভাড়া ছাড়ার নির্দেশ দিলেও কোনোভাবেই যাত্রীছাউনির দখল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী। এতে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক ও জনপদের (সওজ) মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়ক সম্প্রসারণে (ফোরলেন) ওই এলাকার কাজ।
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক সম্প্রসারণে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ অভিযান চালিয়ে ১৩টি যাীত্রছাউনি উচ্ছেদ করেছে। তবে গাংনী বাজার মোড়ের যাত্রীছাউনির ফল ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রশাসনও ব্যর্থ হয়েছে তাকে উচ্ছেদে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনসাধরণের দীর্ঘদিনের দাবি, গাংনী বাসস্টেশন ও হাটবোয়ালিয়া রাস্তার যানজট নিরাসনে বাসস্টেশন রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় মালেক ফল ভান্ডার (যাত্রী ছাউনী) অপসারণ করে সওজ অধিদপ্তরের অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী ইন্টারসেকশনটি নির্মান করা হোক।
- গাংনী বাজারে বাসস্টেশনের কাছে ৩০০ মিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত
- যাত্রীছাউনী দখল রাখতে প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাওয়ার হুমকি ব্যবসায়ীর
- যাত্রীছাউনিটি অপসারণ না হলে গাংনী বাজার মোড় হবে দুর্ঘটনার কেন্দ্র
জেলা পরিষদের কাছে যাত্রীছাউনিটি ভাড়া নিয়ে সেখানে ফল ও মিষ্টির ব্যবসা করছেন আব্দুল মালেক নামের একজন। ভাড়ার প্রতিষ্ঠান নিজের দখলে রাখতে সওজ অধিদপ্তরকে বিবাদী করে গাংনী সহকারি জজ আদালতে একটি মামলাও করেন ফল ব্যবসায়ী। আদালতের বিচারক মাসুদ রানা চলতি নভেম্বরের ১৭ তারিখে দীর্ঘ শুনানী শেষে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ভাড়ার ঘরটি দখলমুক্ত করার জন্য সওজকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরেও দখল ছাড়তে নারাজ আব্দুল মালেক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাংনী বাজারে বাসস্টেশনের কাছে সড়ক সম্প্রসারণ কাজ ৩০০ মিটার অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
সম্প্রতি গাংনী বাজারের ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণ যাত্রীছাউনি দখলের প্রতিবাদ জানিয়ে উচ্ছেদ করে সড়ক সম্প্রসারণে দাবিতে সমাবেশ করে। পরে এই দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয় তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শামীম হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সড়ক সম্প্রসারণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া মোড় ঘুরতে বাস, ট্রাক ও মোটরবাইক চালকরা বিপাকে পড়ছে। তৈরি হচ্ছে যানজট।
জানতে চাইলে যাত্রীছাউনির ভাড়াটিয়া গাংনীর ফল ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমি জেলা পরিষদ থেকে যাত্রী ছাউনীটি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। ওই যাত্রী ছাউনীর জায়গার মালিক মেহেরপুর জেলা পরিষদ। সওজ আমাকে উচ্ছেদ করার কে? প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাব, তবু দখল ছাড়ব না।’
মেহেরপুর সওজের উপবিভাগীয় সহকারি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গাংনী বাসস্টেশনের দুপাশে প্রধান সড়কটির ৩০০ মিটার ফোরলেনের আওতায়। মোড় থেকে হাটবোয়ালিয়া সড়কটিও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। যাত্রীছাউনিটি অপসারণ করা না হলে সেখানে ঢাকা-আরিচা সড়কে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরের মতো প্রতিদিনই গাংনী বাজারের মোড়টিতে মানুষের মৃত্যু ঘটবে।’
প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, ‘সড়ক সম্প্রসারণে যাত্রীছাউনিটির ভাড়াটিয়া দখল ছাড়তে চাইছেন না। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন তাকে উচ্ছেদের, তারপরও তিনি উচ্ছেদে বাধা দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অচিরেই তাকে উচ্ছেদ করে সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে।’তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা পরিসদের প্রশাসক শামীম হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কমিটির তদন্ত করার আগে যাত্রী ছাউনির ভাড়াটিয়া আব্দুল মালেক সওজের নামে একটি মামলা করেছিলেন। চলতি নভেম্বরের ১৭ তারিখে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন ও সওজকে দখলমুক্ত করে সড়ক সম্প্রসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আদালতের নির্দেশও মানছেন না। সওজ চাইলে তাকে উচ্ছেদে সহায়তা দেওয়া হবে।’