রংপুর ব্যুরো
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে- উপদেষ্টা আসিফ
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিব মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, " একটি গ্রেপ্তাতারের (সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস) ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহের মত যুক্ত থাকে, সে যেই হোক তাকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এটা সম্প্রদায় বিবেচনায় নয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। "
আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রংপুরের পীরগাছার পাওটানা কলেজ মাঠে সাধারণের সাথে মতবিনিময় সভা এবং শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, " আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। বাংলাদেশের কোন সম্প্রদায়কে শুধু সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারনে যাতে বঞ্চিত বা নিগ্রহের শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে করছি। তবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার ওপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ, কোন প্রকার আঘাত আসে এবং রাষ্ট্রের প্রতি অবমাননা হয়, রাষ্ট্রদ্রোহের মতো ঘটনা ঘটে সে ক্ষেত্রে সরকার অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেবে।"
সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, "বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন গ্রুপকে উসকে দিয়ে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। গতকাল সোমবার আপনারা দেখেছেন কিভাবে প্রান্তিক জায়গা থেকে ১০০০ করে টাকা দিয়ে, ঋণ দেওয়া স্বপ্ন দিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি চেষ্টা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনাকে নস্যাত করা হয়েছে। এ ধরনের আর কোন ষড়যন্ত্র করা হলে আগামীতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছিল সেই অহিংস বাংলাদেশের আহবায়ক গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে"। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, " যতক্ষণ পর্যন্ত বিকল্প তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের রাখা হবে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে অনেকগুলো নাগরিক সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেজন্য এই কাঠামোগুলো রয়েছে। অতি দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। "
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, " জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাঁদের আমরা ভুলে না যাই। সরকার প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ৩০ লক্ষ্য করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া কর্মসংস্থানসহ বাংলাদেশ সরকার যেন সারা জীবন এই শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকে তা আমরা নিশ্চিত করা হবে।"
আসিফ মাহমুদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে যে উন্নয়ন হয় সেক্ষেত্রে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে নিশ্চিত করা হবে। দেশের বাকি জেলাগুলোতে যে উন্নয়ন হয় সেখানে রংপুরসহ উত্তরবঙ্গে সমতা যাতে নিশ্চিত হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, এলজিইডি রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুল ওহাব খান, পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের জুলাই গনঅভ্যুত্থানে নিহত রঞ্জু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম, সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রানী বেগম ও মামুন মিয়ার বাবা আজগর আলী বক্তব্য দেন। তাঁরা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বন্ধ চিনি কল গুলো চালু করা, কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা, কৃষি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন তিস্তা নদীর উপর পীরগাছা থেকে কুড়িগ্রামের উলিপুরে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে পানিয়ালের ঘাট থেকে তিস্তা নদীর উপর দিয়ে উলিপুরের থেতরাই পযন্ত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান। পরে তিনি নবনির্মিত পীরগাছা উপজেলা পরিষদ ভবনের উদ্বোধন করেন।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা মাহমুদ শিগগির সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি পানিয়ালের তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবীকৃত এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে সকাল ১০ঃ৩৫ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে পীরগাছার শুকানপুকুর হেলিপ্যাডপ নামেন তিনি। সেখানে তাকে গার্ড অফ অনার দেয়া হয়।বিকালে তিনি কাউনিয়া উপজেলার অসহায় ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।