বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

বেনাপোল স্থলবন্দর 

দূরপাল্লার বাস বন্ধ চার দিন, দুর্ভোগে যাত্রীরা

ছবি : সংগৃহীত

যশোরের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের সৃষ্ট জটিলতা টানা চার দিনেও সুরাহা হয়নি। সংকট সমাধানে আজ রবিবার (২৫ নভেম্বর) জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে ঢাকা, যশোর পরিবহন মালিক সমিতি। এতে বাস না পেয়ে বাড়তি টাকা খরচ দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে ভারত ফেরত যাত্রীদের।

এর আগে শুক্রবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি। চারদিন পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবহন বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যেই সোমবার থেকে সাতক্ষীর-নাভারন-ঢাকা রুটের পরিবহন বাস বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ফলে পাসপোর্টধারী ছাড়াও জরুরি কাজে আসা যাত্রীরা বেনাপোল এসে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।


  • শুক্রবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি
  • চেকপোস্ট থেকে ছাড়া বাস পুনরায় প্রবেশ বন্ধ ও দূরে যাত্রী নামানো নিয়ে দ্বন্দ্ব
  • রবিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও সুরাহা হয়নি সমস্যার
  • সোমবার থেকে সাতক্ষীর-নাভারন-ঢাকা রুটের বাস বন্ধ করেছে মালিক-শ্রমিকরা

যানজট নিরসনে চেকপোস্ট থেকে ছাড়া বাস পুনরায় প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়াসহ অনেক রাতে যাত্রীদের চেকপোস্ট থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে বাধ্যতামূলক নামিয়ে দেওয়ার কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ কারণে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, ঢাকা, যশোরসহ সবখানে বাসগুলো টার্মিনাল থেকে কাউন্টারে এসে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যায়, আবার একই স্থানে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে টার্মিনালে চলে যায় বাস। বেনাপোলের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম করা হচ্ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক এই চেকপোস্টে পাসপোর্টযাত্রীদের কথা বিবেচনা করে এখানে পরিবহনের জন্য বাড়তি ছাড় দেওয়া উচিত ছিল। সেটি না করে উল্টো নিয়ম করায় এই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলে যানজট নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। পরিবহন কর্তৃপক্ষ পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে সহমত পোষণ করে সেখান থেকেই দিনের বাসগুলো ছাড়ছিল। যাত্রীদের চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে পৌর টার্মিনালে যাচ্ছিল বাস। এরই মধ্যে গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) গভীর রাতে ঢাকা থেকে আসা বাসের যাত্রী পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে নেওয়া ও বাস প্রবেশে দেওয়া হয় বাধা। এরই প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রাখে মালিক সমিতি।

এদিকে টানা চার দিন দূর পাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকা ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। ভারত থেকে আসা যাত্রীরা বলেন, বাংলাদেশে পরিবহন বন্ধ জানত না তারা। ফলে বেনাপোলে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া যাত্রীরা। এদিকে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানে রবিবার বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। বৈঠকে কোনো ফলপ্রসু সমাধান হয়নি। ফলে টানা চার দিনের মতো পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে জানান বেনাপোল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু।

বেনাপোল চেকপোস্টে শ্যামলী-এনআর বাস কাউন্টারের স্টাফ মনজিল হোসেন বলেন, ‘যাত্রী ভোগান্তি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ না থাকার কারণে ঢাকার মালিকদের নির্দেশে চার দিন ধরে বেনাপোল রুটে কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন বাস ছাড়েনি। তারা পরবর্তীতে নির্দেশ দিলে পরিবহন সেবা আবারও শুরু করা হবে।’

খুলনা বিভাগ ও যশোর জেলা বাস মালিক সভাপতির মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ায় গাড়ির জট কমে গেছে। বাস চলাচলে যানজটও হয় না। ভারত-বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে যানজটের সৃষ্টি হতো। দূরপাল্লার যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার দাবী জানান এই মালিক নেতা।

জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ড. নাজীব হাসান বলেন, ‘কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই। তাদের কোনো কিছু বলার থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারে। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে এটা করা হয়েছে। উপদেষ্টা সাহেবের নির্দেশ ব্যতিত আমাদের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠা-নামা করতে হবে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close