ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
ধর্মপাশায় ফসলি জমিতে অবৈধ ইট ভাটা
৩১ বছর ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছে গ্রামবাসী
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রাম সংলগ্ন ফসলি জমিতে গত ৩১ বছর ধরে অবৈধভাবে ইটভাটার কার্যক্রম চলে আসছে।
ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় বোরো, আমন ধানের ফসলি জমিতে ধান ও ফলদ গাছের ফল উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ভাটা সংলগ্ন গ্রামের মানুষেরা জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগ ভালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। এ নিয়ে মহদীপুর গ্রামের মানুষজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলর সদর ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রাম সংলগ্ন ফসলি জমিতে ১৯৯৩ সালে মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামের ইটের ভাটাটি দুই একর ১৪ শতক কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকে টিনের চুঙা ও লাকড়ি দিয়ে ইট পুড়ানো হতো। ২০০৪ সাল থেকে ঝিক ঝাক পদ্ধতিতে ফিক্সড চুঙ্গা স্থাপন করে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
এই ইট ভাটাটির স্বত্তাধিকারী ছিলেন, উপজেলার মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। ২০২১ সালের ১৯জুলাই তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর দুইজন স্ত্রী ও এক ছেলে এই ইটভাটাটির স্বত্তাধিকারী হন। তাঁরা তিনজনই এখন এটি পরিচালনা করে আসছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহদীপুর, আতকাপাড়া, বাহুটিয়াকান্দা ও পূর্বপাড়া সড়কের হাটি গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে এই ইট ভাটার বিষয়ে কথা বললে তারা বলেন, ইটের ভাটা স্থাপনের জায়গাটিতে বীজতলা, পাট, ধনচে ও বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করা হতো। গ্রাম সংলগ্ন ইট ভাটা হওয়ায় সারা বছর আমাদের সর্দি, কাশি ও জ্বর লেগেই থাকে। দ্রুত এটি বন্ধ করা প্রয়োজন।
একই গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন (৩৫) বলেন, আমার বাড়ি থেকে ৫০ ফুট সামনেই অবৈধ এই ইট ভাটা। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম ভাঙিয়ে ফসলি জমিতে গত ৩১বছর ধরে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চলে আসছে। এখানে বেশ কয়েকজন কৃষকের জমি ইট ভাটার মালিকেরা অবৈধ দখলে রেখে ভাটার কাজে ব্যবহার করে আসছেন। অতীতে যারা এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে ভাটার মালিক হয়রানি করেছেন। দেশে পট পরিবর্তন হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকের কাছে চলতি বছরের ১৯সেপ্টেম্বর ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে আমি লিখিত অভিযোগ করেছি।
মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ডের স্বত্তাধিকারীদের তিনজনের মধ্যে একজন হলেন রেজুয়ান ইসলাম রাকীব। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা সরকারি বিধিমালা মেনে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। আমরা কারও জায়গা দখল বা কাউকে হয়রানি করিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক বলেন, গতকাল বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ধর্মপাশার মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামের ইট ভাটা এলাকায় গিয়ে অভিযোগকারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তদন্তে অভিযোগের কিছু বিষয় প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যো এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরেের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিডিএস/ এল