গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

অল্প খরচে বেশি লাভ

সিরাজগঞ্জে ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

অল্প খরচে অধিক লাভের সুযোগে সিরাজগঞ্জে ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকরা। এই প্রেক্ষিতে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ব্রহ্মকোলা গ্রামের কৃষক এস এম ইদ্রিস আলী বাউ তিন প্রকারের ড্রাগন ফল চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন। ড্রাগন চাষের দ্বিতীয় বছরে এসে তিনি এই সফলতার মুখ দেখেছেন। যদিও এটি একটি বিদেশি ফল, তবুও দেশের মধ্যে এর উৎপাদন এতটাই বেড়েছে যে, এখন এটি দেশীয় ফল হিসেবেই পরিচিত। ইদ্রিস আলী একজন গ্রাম্য ডাক্তার হলেও কৃষির প্রতি তার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তিনি তাঁর পৈতৃক জমিতে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, চিয়া বীজ, রোশমেলন এবং বারোমাসী তরমুজের চাষ করেন। এসব ফসল ছিল এক বছরের মেয়াদী। তিনি ২০২৩ সালে দীর্ঘ মেয়াদী এই ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন।

তিনি বলেন, লাভজনক হওয়ায় পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার একটি নার্সারি থেকে চারা এনে দু’বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার ২৭০ টাকা। তিনি জানান, ড্রাগন চারা একবার রোপণ করলে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ১০ বছর ফলন দেয়। এ বছরে তার বাগানে যে ফলন হয়েছে, তাতে তিনি প্রায় ৮ লাখ টাকার ফল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি ৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন বলেও জানান। তার এই সাফল্যে এলাকার অনেকেই ড্রাগন চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছে, এমনই খবর আসে। তার সফলতা দেখে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকেরা এসে পরিদর্শন করছে এবং অনেকেই ড্রাগন চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

ব্রহ্মকোলা গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় প্রতিদিনই এই বাগানে আসেন। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, ডাক্তারি ছেড়ে যে বাগান করলেন, তাতে এত টাকা খরচ করে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু এখন দেখছি, তিনি সফল। তাই আমি চিন্তা করছি নিজেই একটি ড্রাগন বাগান করবো। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ড্রাগন ফলের চাষ, চারা উৎপাদন ও ফল বিক্রি করে দ্রুতই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন।

সরেজমিনে তার বাগানে গেলে দেখা যায়, রোপিত এসব গাছে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ড্রাগন ফুল ও ফল। ইতিমধ্যে তিনি নিজেই চারা উৎপাদন করেছেন এবং নতুন করে আরো ২৬০০ চারা রোপণ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ফল ও চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লক্ষ থেকে দুই লক্ষ টাকা আয় করতে সক্ষম হবেন। সিরাজগঞ্জ এবং আশপাশের এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে বাগান থেকেই ফল কিনে নিয়ে যায়। আবার সিরাজগঞ্জ শহরেও আড়তে ফল বিক্রি করেন। তিনি জানান, ফলের চাহিদা এত বেশি যে, আরও বাগান হলে ফল বিক্রিতে কোনও সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জানান, আমি নিজে তার বাগান পরিদর্শন করেছি। বাগানের পরিচর্যা এবং ফল বৃদ্ধির কৌশল পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি ফল ড্রাগন চাষে খরচ কম। দেশে বিভিন্ন জাতের ড্রাগন চারা পাওয়ায, এই চাষাবাদের মাধ্যমে বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ড্রাগন চাষিদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে। তিনি আরো বলেন, দেশের বেকার যুবকদের এই চাষাবাদের উপর প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিতে পারলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের বিশাল সুযোগ রয়েছে।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,ড্রাগন ফল
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close