কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার লিংকরোড় - ডলফিন মোড় মহাসড়কে পার্কিং
পর্যটক ভোগান্তির চরম আশঙ্কা
পর্যটনের রাজধানী খ্যাত জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমন পিপাসু মানুষের প্রধান আকর্ষণ। প্রতিবছর ডিসেম্বর টু ফেব্রুয়ারীতে লাখো লাখো পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে এ শহরটি। বছরের অন্যান্য সময় ও পর্যটক থাকে কমবেশি। পর্যটকদের সুবিধার্থে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক হোটেল মোটেল জোন, টুরিস্ট পুলিশ, পর্যটন সেল, মেরিন ড্রাইভ রোড়, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর ও বিভিন্ন বিনোদনমুলক ব্যবস্থা। সব বিষয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলে ও সম্পূর্ণ হ-য-ব-র-ল অবস্থায় রয়েছে পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট টার্মিনালের।
দেশের সকল জেলা হতে আগত দূরপাল্লার বাস রাখার জন্য ২০০১ সালে নির্মিত হওয়া একটি নির্দিষ্ট বাসটার্মিনাল থাকলেও সেখানে গাড়ি রাখার জায়গা নেই বললেই চলে। গাড়ি রাখবার জায়গা গুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গ্যারেজ, কাউন্টার এবং অসংখ্য বেকারী। এসব আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গ্যারেজ ও বেকারীর মালিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
ঝিলংজা ইউনিয়নের আওতাধীন এলাকায় নির্মিত হওয়া টার্মিনালটি শুরু থেকেই সম্পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের দায়ীত্ব দেওয়া হয় কক্সবাজার পৌরসভাকে। ফলে যতবার পৌরসভার মেয়রের পরিবর্তন হয়েছে ততবারই গাড়ি রাখবার জায়গা গুলো দলীয় নেতৃবৃন্দ ও মেয়র-কাউন্সিলরদের নামে বে-নামে নামেমাত্র মুল্যে লীজ দেওয়ার নামে দখল করা হয়েছে। শুরুতে ২৫০-৩০০ গাড়ি রাখার লক্ষ্যে টার্মিনালটি নির্মিত হলেও বর্তমানে গাড়ি রাখা যায় সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টি।
কক্সবাজার বাসটার্মিনালে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসা আমির হোসেন বলেন, এক সময় বাসটার্মিনালে অনেক প্রসস্থ জায়গা ছিল, তখন ২৫০-৩০০ দূরপাল্লার বাস রাখার স্থান ছিল। তবে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৫০ টির বেশি বাস রাখার জায়গা নেই। বেশির ভাগ গাড়ি রাখবার জায়গাতে নির্মিত হয়েছে আবাসিক হোটেল, গ্যারেজ, বেকারী দোকান এবং কাউন্টারের মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। আর এই দখলেন মুল কারিগর অবশ্যই সাবেক ২ মেয়র, মুজিবুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান এবং পৌর সচিব।
আগামী মাস হতে পর্যটন মৌসুম আরম্ভ হবে। পর্যটকদের বহন করে নিয়ে আসা দূরপাল্লার বাস গুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তীব্র যানজটের শংঙ্খায় আছেন ব্যবসায়ীরা। যানজটের ফলে পর্যটকরা অতিষ্ট হয়ে উঠে অনেক সময় ফিরে যায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই লিংকরোড় হতে ডলফিন মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পার্কিং করা হয় দূরপাল্লার বাস। মৌসুম শুরু হলে তার আকার আরো বাড়বে নিঃসন্দেহে। মহা সড়কে এভাবে বাস পার্কিং করে রাখলে তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক বিভাগে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী পিপিএম বলেন "জেলার একমাত্র বাস টার্মিনালটি পৌর কতৃপক্ষ গ্যারেজে পরিনত করে রেখেছে। দূরপাল্লার বাস তো দুরে থাক স্বল্পপাল্লার বাস গুলো এখন মহা সড়কের পার্শ্বের কাউন্টার স্থাপন করে যাত্রী সেবা দিচ্ছে। যার কারনে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শুক্র শনিবার অতিরিক্ত পর্যটকবাহী গাড়ি শহরে প্রবেশের কারনে পাবলিক টার্মিনালে গাড়ি পার্কিংয়ের পর ও অতিরিক্ত গাড়িগুলো মহাসড়কে পার্কিং করতে বাধ্য হয় এবং আমরা ও কিছুটা সময় ছাড় দিয়ে থাকি।
পুলিশ সুপার অফিস থেকে একটি অনলাইন টার্মিনাল চালু করেছি, সেখানে সিডিউল থাকে কোন গাড়ি কোন কাউন্টার হতে কয়টায় ছাড়াবে সেটির। আমরা চেষ্টা করছি আগত পর্যটন মৌসুমে যানজট সম্পূর্ণ নিরসনের এবং একটি পর্যটন বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।
এ বিষয়ে আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক নেতা করিম এর কাছে জানতে চাইলে জানান:- আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার অভিযোগ দিয়ে আসছি টার্মিনাল সংস্কার করে কার্যকর টার্মিনালে রুপান্তর করতে। ওনারা ও আমাদের আশ্বাস দেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেননা। বর্তমান টার্মিনালটি একপ্রকার গ্যারেজ বলা চলে। এটিকে কার্যকর টার্মিনালে রুপান্তর করতে পারলে মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং আশি ভাগ কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস"।
আগামী পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালটিকে গ্যারেজ হতে প্রকৃত টার্মিনালে পরিনত করে দূরপাল্লার ও স্বল্পপাল্লার বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে মহাসড়কের যানজট নিরসন করার অনুরোধ জানান পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এতে করে পর্যটন ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে এবং পর্যটকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।