রংপুর ব্যুরো
রংপুরে মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের উত্তর পানাপুকুর গিড়িয়ারপাড় দাখিল মাদ্রাসার সুপার জালাল উদ্দিন একই পদে দুইজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়াসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
গত ৩০/১১/১৪ সালে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে যোগদান করার পর দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন সুপার জালাল উদ্দিন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নৈশ্য প্রহরী মনোয়ারুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পদাধিকার বলে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও মাদ্রাসা অধিদপ্তর ঢাকায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
- সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে যোগদান করার পর দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন সুপার জালাল উদ্দিন।
- সুপার জালাল উদ্দিন ও সাবেক সভাপতি গোলাম আজিজ আল ইমরানের যোগসাজসে ৫টি পদে নিয়োগ বাণিজ্যে ৪৫ - ৫০ লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
- সরকারি বরাদ্দের প্রনোদনার ৫ লাখ টাকা পেলেও শুধু মাত্র শিক্ষকদের ২০% টাকা দিয়ে বাকী ৪ লক্ষ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের সেশন ফি, পরীক্ষার ফি সহ প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগও রয়েছে সুপার জালালের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুপার জালাল উদ্দিন ও সাবেক সভাপতি গোলাম আজিজ আল ইমরানের যোগসাজসে ৫টি পদে নিয়োগ বাণিজ্যে ৪৫ - ৫০ লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে জমি বন্ধক ও লিজ বাবদ প্রায় ৩৫ -৪০ লক্ষ টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় সরকারি বরাদ্দের প্রনোদনার ৫ লাখ টাকা পেলেও শুধু মাত্র শিক্ষকদের ২০% টাকা দিয়ে বাকী ৪ লক্ষ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের সেশন ফি, পরীক্ষার ফি সহ প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগও রয়েছে সুপার জালালের বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী নৈশ্য প্রহরী মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে এম এল এস এস (পিয়ন) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি 'দৈনিক আখিরা' পত্রিকায় প্রকাশ করলে আমি উক্ত পদে আবেদন করি এবং ৪ মার্চ ২০১৪ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নৈশ্য প্রহরী পদে যোগদান করি এবং আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততার সাথে পালন করে আসছি। জনবল কাঠামো ২০১৮ (সংশোধিত) ২০২০ অনুযায়ী প্রতিটি দাখিল মাদ্রাসায় আরো ২ টি নতুন পদ সৃষ্টিত হয়। যার ১টি পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও অপরটি আয়া পদে নিয়োগ দিতে পারবে প্রতিষ্ঠান কিন্তু সুপার জালাল উদ্দিন বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নীতিমালা বহির্ভূত ও গোপনেই গত ১ নভেম্বর ২০২০ সালে নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ প্রদান করেন।এরপর আবারো একই কৌশলে গোপনে সভাপতি ও সুপার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে পূণরায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্থালে নৈশ্য প্রহরী পদে আব্দুর রাজ্জাক নামক জনৈক ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করেন যা নীতিমালা বহির্ভূত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ নিয়োগ প্রদান করে এমপিও 'র জন্য অধিদপ্তরে পাঠালে নীতিমালা বহির্ভূত হওয়ায় আব্দুর রাজ্জাকের এমপিও হয়নি।
নৈশ্য প্রহরী মনোয়ারুল ইসলাম অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ বাতিলে জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী নৈশ্য প্রহরী পদ বাতিল করে পুনরায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দিয়ে সমস্যার সমাধানে জোর দাবি জানিয়েছেন মনোয়ারুল।
জানা যায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান (এসএমএজি/ এমএমএজি/ জিবিএজি) হিসাবে পাঁচ লাখ টাকা ওই মাদ্রাসার ৫টি খাতে বরাদ্দ করা হয়।শিক্ষকদের প্রণোদনা, বইপত্র লাইব্রেরি শিক্ষা উপকরণ এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম ইত্যাদি, শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও প্রতিবন্ধী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটির উন্নয়নের জন্য এই পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষকদের প্রণোদনার ১ লক্ষ্য টাকা দিয়ে ৪ লক্ষ্য টাকা আত্মসাত করেছেন সুপার ।
সহ সুপার শহীদ আলী ও সহকারী শিক্ষকগণ একাধিকবার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি টাকা প্রদান ও নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন করার কথা বললেও দুর্নীতিবাজ সুপার জালাল উদ্দিন এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমল নেয়নি।
এ ব্যাপারে সুপার জালালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগে গত ৭ নভেম্বর এলাকাবাসী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ তার অপসারণ ও শিক্ষার্থীদের প্রণোদনার টাকার দাবিতে সুপারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। গত ৭ নভেম্বর বিকেলে গঙ্গাচড়া থানা পুলিশ সুপার জালালকে উদ্ধার করে।
সুপার ও সভাপতির দূর্নীতির বিষয়ে ঐ এলাকার সাবেক শিক্ষার্থী ও অবিভাবক সাহেব আলী বলেন, আমাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি ইমরান সভাপতি হওয়ার পর জালালকে সুপার নিয়োগ দিয়ে দূর্নীতি করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । একই বিষয়ে মদ্রাসা সংলগ্ন দোকানদার লাভলু মিয়া বলেন, দাখিল মাদ্রাসার কোন জমি না থাকলেও ফোরকানিয়া মাদ্রাসার ৪ একর জমি ৩৫- ৪০ লক্ষ টাকায় বন্ধক রেখেছে সুপার জালাল ও সভাপতি ইমরান। কে এই সুপার জালাল উদ্দিন দুর্নীতির পাহাড় গড়ে অদ্যবধি বহাল তবিয়তে চাকুরী করে যাচ্ছেন এর খুটির জোর কোথায়। কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাওয়ার পরও নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি গোলাম আজিজ আল ইমরানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,সব জমি পূর্বের কমিটি বন্ধক রেখেছে আমরা সেই বন্ধকের উপরে শুধু বাড়তি টাকা নিয়ে মামলা চালাইছি। একই বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার জালাল বলেন, চারটি কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি, মামলা চালানোর তাগিদে কিছু বন্ধুকী জমির উপরে বাড়তি টাকা নিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমান সভাপতি নাহিদ তামান্না বলেন, আমরা কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তবে তাদের লিখিত জবাব পাওয়ার পরে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।