সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
নীরবে কেটে গেল যুদ্ধদিনের বীরত্ব গাথার দিন
আজ সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন পলাশ ডাঙা যুব শিবিরের গৌরবময় বীরত্ব গাথার দিন। ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এক ভয়াবহ যুদ্ধে পাক হানাদারদের ১৩০ জন সদস্য প্রাণ হারায়। এর বিপরীতে পলাশ ডাঙা যুব শিবিরের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের জাইঙ্গলাগাতি গ্রামে চান্দু নামে এক হতদরিদ্র ক্ষেতমজুরের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া পাঁচজন তরুণের উদ্যোগে এই আয়োজন শুরু হয়।
তারা হলেন সোহরাব হোসেন সরকার, আব্দুল আজিজ সরকার সহ আরো তিনজন। এই তরুণরা ভারতে যাওয়ার নৌকা না পেয়ে নিজেরাই এই সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পরে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধারা পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরে যোগ দেন। নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল লতিফ মির্জা। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও বগুড়া অঞ্চলে বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধের পরিসর। পলাশ ডাঙা যুবশিবিওে ছিল ৭৫০ জন যোদ্ধা। পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক ছিলেন প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা ও সহ পরিচালক আমজাদ হোসেন মিলন প্রমুখ। চলনবিলের বিস্তৃর্ণ এলাকার তারা ছড়িয়ে পড়েন এবং পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাড়াশ উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী আরশেদুল ইসলাম জানান, এবার ঐতিহাসিক নওগাঁ দিবস উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি গৃহীত হয়নি। পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের যোদ্ধারা পয়লা দালালদের বাড়ি আক্রমণ ও রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করে সফল হয়। সাহস বাড়ে, সেই সঙ্গে হাতে আসে কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। এলাকায় নাম ছড়িয়ে যায়। সংগঠনটির নান্দনিক নাম দেন আজিজ সরকার। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সেনাবাহিনীর সদস্য ব্যাটালিয়ান কমান্ডার লুৎফর রহমান অরুন। এতে তারা অস্ত্র চালানো শেখেন। থানা আক্রমণ করেও সফল হন।
ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসা আব্দুল লতিফ মির্জা, বিমল কুমার দাস, আব্দুল হাই তালুকদার প্রমুখ পলাশ ডাঙা যুব শিবিরে যোগ দেন। সিরাজগঞ্জে এই গ্রুপ রীতিমতো সবার মুখে মুখে ফিরতে থাকে। গ্রুপের নেতা লতিফ মির্জাকে নিয়ে স্থানীয় চারণ লোকশিল্পীরা গান লিখে সুর দিয়ে গাইত।
১১ নভেম্বরে বর্ষা শেষে চলনবিলের পানি নেমে যায়। ওই এলাকার সামান্য পানির নীচে পলিমাটিতে স্যুটেটবুটেট পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পা আটকে যেতে থাকে। তারা সহজে মুভ করতে পারে না। তাদের মনোবল ভেঙে যায়। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে দা কুড়াল খোন্তা কাড়াল লাঠি হলঙ্গা নিয়ে পাবলিকও নেমে পড়ে। তারা পাক বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের পেটাতে থাকে, অনেকে মারা যায়, আর জীবিতদের ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সোপর্দ করে।
যোদ্ধারা ভারতে না গিয়ে দেশের মাটিতে বসে রচনা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস। পরবর্তীতে সোহরাব হোসেন সরকার ছাড়া পলাশগাঙার প্রায় সকল যোদ্ধাই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদে যোগ দিয়েছিলেন।