গাজীপুর প্রধিনিধি
একাংশের ফের অবরোধ, ৪৫ কারখানা ছুটি ঘোষণা
গাজীপুরে ৫৩ ঘন্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার
গাজীপুরে টানা প্রায় ৫৩ ঘন্টা পর আজ সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করেছে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের দেওয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেন। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে ঘন্টা খানেক পর শ্রমিকদের একটি অংশ পুনরায় একই স্থানে একই দাবিতে অবরোধ করে রাখে। এদিকে শ্রমিক অন্দোলনের কারণে সোমবার আশেপাশের ৪৫টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অবরোধ প্রত্যাহারের পর শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার নেতৃত্বে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। পরে অবরোধকারী শ্রমিকদের বক্তব্য ওই অলোচনার পর অবরোধর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, মহানগরীর মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড গ্রুপের শ্রমিকরা গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনে নেমে কারখানা পাশ্ববর্তী কলম্বিয়া এলাকায় ওই মহাসড়ক অবরোধ করে।
এসব কারখানার শ্রমিকদের গত দুই মাসের (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) বেতন বকেয়া রয়েছে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর নির্ধারিত তারিখে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও ওইদিন তা পরিশোধ না করে কর্মকর্তারা কারখানা তালাবদ্ধ করে চলে যায়।
এরপর থেকে মালিক পক্ষের লোকজন কারখানায় আসেন নি, এমনকি কারখানাটির উৎপাদন কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিনই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় এসে ফিরে যায়। এর জের ধরে শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কলম্বিয়া কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কের উভয় পাশে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থেকে রাতভর সড়কের উপর অবস্থান করতে থাকে। তারা গত তিনদিন ধরে দিন ও রাতে পালাক্রমে অংশ নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। লাগাতার অবরোধের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে গাজীপুরের জনজীবন।
এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাপী যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভয়াবহ যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। তরিতরকারি ও কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যবাহি যানবাহন আটকা পড়ে মালামালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ মিয়াসহ সেনাবাহিনী, র্যাব, শিল্প ও থানা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইউএনও-এর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএইচএম শফিকুজ্জামান শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের এ কথোপকথন মাইকে প্রচার করা হয়।
এ সময় শিল্প সচিব শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগামী রবিবারের মধ্যে সরকারের উদ্যোগে ৬ কোটি টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বন্ধক রাখা হবে। এ সময় তিনি জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করেন। তার এ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর সোয়া ২ টার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করে। পরে শ্রমিকদের ২৫/২৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ইউএনও এরশাদ মিয়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থল থেকে রওনা হন।
এদিকে অবরোধ প্রত্যাহারের প্রায় এক ঘন্টা পর বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনর শ্রমিকদের একটি অংশ ফের ওই এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে। তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবির সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় অবরোধকারী শ্রমিকরা।
বিকেল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ফারুকুল আলম জানান, এখন পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। তাদের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে গেছেন। আলোচনার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তারা অবরোধের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন। এসময় তিনি আরো জানান, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের অন্ততঃ ৪৫টি কারখানা সোমবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শনিবার থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে টিএনজেড এর আন্দোলনরত শ্রমিকরা। তৃতীয় দিন সোমবার দুপুরে অবরোধ প্রত্যাহারের কিছু সময় পর তারা মহাসড়ক পুনরায় অবরোধ করে।