ইকবাল কবির লেমন, সোনাতলা (বগুড়া)
অসময়ে অসহায়ের ভরসা সাপের ওঝা নাজিম উদ্দিন
সাপের ওঝা নাজিম উদ্দিন। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পরিচিত এক নাম। শুধু সোনাতলা নয় বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে একনামে পরিচিত তিনি। সাপে কাটলে আতঙ্কিত মানুষের ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় সোনাতলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের নাজিম ওঝার বাড়ি। রাত-দিন একাকার করে তিনি ছুটে চলেন সাপে কাটা রোগীর বাড়ির পানে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেন চিকিৎসা। তাঁর প্রাণান্ত চেষ্টায় একসময় সুস্থ হয়ে ওঠে রোগী। বাড়ি ফিরে আসেন ওঝা নাজিম উদ্দীন।
শুধু সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসাই নয়, রাত-বিরাতে কারো বাড়িতে অতিরিক্ত সাপের উপদ্রব হলে ভরসা দিয়ে তিনিই পাশে দাঁড়ান। দীর্ঘদিনে রপ্ত করা কৌশলে মাটি খুড়ে উদ্ধার করেন জীবীত সাপ। মাটির উপরের সাপ ধরতেও সিদ্ধহস্ত তিনি।
গত ৫০ বছরে এভাবে অসংখ্য সাপে কাটা মানুষকে সুস্থ করেছেন তিনি। এছাড়াও মানুষকে যেমন তিনি সাপের কামড় থেকে বাঁচিয়েছেন, তেমনি তাদের করেছেন ভীতিমুক্ত।
নাজিম উদ্দিন ওঝা সম্বন্ধে কথা হয় সোনাতলা পৌর সদরের বন্দর এলাকার জসিম উদ্দিন বেপারীর সাথে। তিনি বলেন, সাপে কাটা বা সাপের উৎপাতের কোন ঘটনা ঘটলেই এ অঞ্চলের মানুষ স্মরণাপন্ন হন ওঝা নাজিমের। তিনি গভীর মমতা ও আন্তরিকতার সাথে সমাধান করেন সমস্যার। নাজিম ওঝা আমাদের আস্থা ও ভরসার নাম।
এ ব্যাপারে ওঝা নাজিম উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই সাপের বিষয়ে আগ্রহ ছিল আমার। সোনাতলার মধুপুর গ্রামের ওঝা আব্দুল মজিদ কোথাও সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করাতে গেলে বা সাপ ধরতে গেলে আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকে অনুসরণ করতাম। একসময় তাঁকে ওস্তাদ মেনে তাঁর সাগরেদ হয়ে যাই আমি। প্রথম দিকে তাঁর শেখানো চিকিৎসা দিলেও পরবর্তীতে তার সাথে যোগ হয় আধুনিক চিকিৎসা।
আমি সরকারিভাবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েক স্থানে সাপের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সাপ রয়েছে ৮২ প্রজাতির। এর মধ্যে বিষধর সাপের প্রজাতির সংখ্যা ২৮। এই ২৮ প্রজাতির সাপের মধ্যে শুধু নির্দিষ্ট ধরনের সাপের জন্য এন্টিভেনামের সহজলভ্যতা রয়েছে দেশে। এধরনের ঘটনা ঘটলে আমি সংশ্লিষ্ট সাপে কাটা রোগীকে দ্রুত এন্টিভেনাম দেয়ার পরামর্শ দেই।
এ পর্যন্ত আমি প্রায় ৫/৬ হাজার সাপে কাটা রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছি। আমার হাতে কোনো সাপে কাটা রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা নেই। এ যাবত সাপ ধরেছি প্রায় ১৪/১৫ হাজার। আমি ধৃত সাপগুলোকে পরে লোকারণ্যের বাইরে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেই। সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করা অথবা সাপ ধরে দেয়ার বিনিময়ে চাহিদা করে কিছুই নেই না। চিকিৎসা কিংবা সাপ ধরার কারণে অনেকেই যৎসামান্য অর্থ দিলেও কেউ খুশি হয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়ে থাকেন। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।
এটি আমার পেশা হলেও আমি ব্যবসাসহ গৃহস্থালী কাজেও জড়িত আছি। আমি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করে তোলার মতো মহৎ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চাই।
পিডিএস/এমএইউ