মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
মধুপুরে অভ্যুত্থানে বিরোধীতা
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ফেরারী, পাঠদান ব্যাহত
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস ধরে এসব শিক্ষকরা ক্লাসে নেই
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষক সরাসরি সাবেক সরকারপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। এমন শিক্ষকের সংখ্যা ২০ জনের মত। ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
এসব শিক্ষক না থাকায় ক্লাসের পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাস ধরে এসব রাজনীতিক শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে পাঠদান থেকে বিরত রয়েছেন। এদিকে বছর শেষ হয়ে আসছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ হওয়াটা অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার আগেই সিলেবাস শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চিন্তায় পড়ছে। উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরূপ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
আত্মগোপনে থাকা এমন শিক্ষকের সংখ্যা বিশ জনের অধিক। তবে ইতিমধ্যে অনেকে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে সরকার নির্ধারিত চিকিৎসা-ছুটি নিতে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ছুটির আবেদন করেছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে এমনটাই পাওয়া গেছে। উপজেলায় একটি সরকারী কলেজসহ মোট ৮ টি কলেজ রয়েছে। এই ৮ টি কলেজের মধ্যে ২ টি কলেজের অধ্যক্ষ সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তারা দুজন আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগে মধুপুরে তিনটি মামলা হয়েছে। এই মামলার অন্যান্য আসামীদের মধ্যে তারা দুজনও আসামী হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশি সমালোচিত হয়েছেন চাপড়ি গণ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম সবুজ। তিনি একাধিক মামলার আসামী। অপরদিকে রয়েছেন আউশনারা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জুয়েল। তিনি একটি মামলার আসামী। এই দুই আসামীর সঙ্গে আরোও দুইজন আসামী হলেন আউশনারা কলেজের প্রভাষক মনিরুজ্জামান মনি ও সালেহ আহমেদ। তারাও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। মধুপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক খন্দকার লাবু, নাগবাড়ী তা’লিমুল দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও. নোমানুর রহমানও ফেরারী। এই মামলায় আসামী হয়েছেন আলোকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা আবুল কালাম আজাদ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুজ্জামান খান শামীম মাস্টার তিন মামলার আসামী। আন্দোলনের পর থেকেই তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি খুব অসুস্থ অবস্থায় আছেন। ভাল চিকিৎসার জন্য ছুটিতে আছেন। ফাজিলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সেলিনা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তবে তিনি জানিয়েছেন, প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের চাপের মুখে তিনি বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না। পরে অসুস্থতার কথা বলে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান জানান, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বেশ কিছু শিক্ষকের অসুস্থতা সংক্রান্ত ছুটির আবেদন জমা আছে। ৫ আগষ্টের পর যে সকল শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ৫ নভেম্বরের মধ্যে হালনাগাদ চাওয়া হচ্ছে। ১০ তারিখের মধ্যে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে তাদের তথ্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠানোর কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকই তাদের একমাত্র পরিচয়। রাজনৈতিক পরিচয় তাদের জন্য শোভনীয় নয়। পরিশেষে সবাইকে শিক্ষকতায় ফিরে আসতে তার আহবান।