সিলেট প্রতিনিধি
অফিসে ফিরেই অবরুদ্ধ সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই 'লাপাত্তা' ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। এর থেকে তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রায় আড়াইমাস পর আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় অফিসে আসেন তিনি।
ভিসি কার্যালয়ে এসেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে এসো জড়ো হন বেতন বঞ্চিতরা। এক পর্যায়ে চাকরি নিয়মিতকরণ ও বকেয়া বেতন-ভতা পরিশোধের দাবিতে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পর ভিসি ১৫ দিনের মধ্যে দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিলে তার অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হয়।
এর আগে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও বিষয়টি সুরাহা করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ভিসি, ট্রেজারার সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে লাপাত্তা ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও দেখা মিলেনি তাঁর।
তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার সকালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সভাপতি আব্দুস সামাদ চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক বলতে কেউ নেই। ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা। আজ যুবলীগ-ছাত্রলীগকে নিয়ে ভিসি ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে তাঁরা অবস্থান নেন।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে নাম পাল্টে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নঈমুল হক চৌধুরী নিয়োগ বাণিজ্যসহ ব্যাপক জালিয়াতি করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়াদ শেষ হলে প্রথমে চাকরি হারান রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নঈমুল হক চৌধুরী। এরপর একই পথে যেতে হয় ভিসি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকেও।
প্রথম ভিসির মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের শুরুতেই দ্বিতীয় ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। ডা. এনায়েত হোসেন যোগ দেওয়ার আগেই আগের উপাচার্যের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা স্থগিত করার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো বেতন-ভাতা পাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নিয়োগের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করার আশ্বাস দেন ভিসি ডা. এনায়েত। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দুই বছর হলেও এসবের কোনো কিছুই করেননি তিনি। উল্টো কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্য থেকে নিজের পছন্দমতো বিভিন্ন পদে নতুন করে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেন ভিসি এনায়েত। আগের ভিসির মতো তাঁর বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এই অবস্থায় সৃষ্ট জটিলতা ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন চলাকালেই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা। গত মাসে পদত্যাগ করেছেন রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ভিসি ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।