ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
একইসঙ্গে ফাতেমার তিন দপ্তরের দায়িত্ব
সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতেও নিজের সরকারী দপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের দুই দায়িত্ব একই সামলাচ্ছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা।
জানা গেছে, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি’র দায়িত্বে থেকেও ধনবাড়ী পৌরসভার প্রশাসক ও যদুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়েও সহানুভূতিশীল ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিন দায়িত্ব একসঙ্গে সামলাতে তিনি সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ধনবাড়ী উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তার সকল দপ্তর থেকে সঠিক সেবা পাচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত ফি’র মাধমে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত নাগরিক সেবা পাচ্ছেন পৌরসভাসহ তার প্রত্যেকটি দপ্তরে।
পৌর এলাকার সকল রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সকল উন্নয়ন মূলক কাজ চলমান রয়েছে। সেই সাথে সড়কে যানচলাচল নিরাপদ করতে সড়ক বাতি স্থাপন ও মহাড়কে লোহার রড় ও বাঁশ দিয়ে দূর্ঘটনা রোধে ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-জামালপুর মহাসড়কের ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে দূর্ঘটনার ঝুকি কমেছে। তিনি দায়িত্ব পওয়ার পর থেকে পৌরসভার রাস্তার ময়লা অপসারণ কাজ জোরদার হয়েছে। পৌরভার দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে মহাসড়কে যানচলাচল সুগম করতে পৌরসভা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিএনজি, অটো এর এলোমেলো অবস্থানকে সুশৃঙখল করতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন। একই সাথে যান চলাচলের সুবিধার্থে সড়কের পাশে এবং ফুটপাতে অবস্থিত সকল অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। পৌরসভার চারিত্রিক সনদ, আর্থিক সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, অভিভাবক সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, নির্ভরতা সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, ওয়ারিশান সনদ, ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, স্বাক্ষর সত্যায়ন সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, ভোটার সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, বিদ্যুত সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, নাগরিকত্ব সনদসহ সকল পৌর নাগরিক সুবিধা সঠিকভাবে পেয়ে যাচ্ছেন পৌর নাগরিকরা। এসকল কর্মকান্ডে পৌর এলাকাবাসীর কাছে বহুল প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
অপরদিকে, যদুনাথপুর ইউনিয়নে প্রায় ১ বছর যাবত পরিষদে আটকে থাকা ওএমএস কার্ডধারী ব্যক্তিদের কার্ড সঠিক কার্ডধারী ব্যক্তিদের মধ্যে বন্টন করা হয়। কার্ডধারী ব্যক্তিরা কার্ড পাওয়ার পর থেকে সঠিকভাবে নির্বিঘ্নে চাল উত্তোলন করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করছেন এবং কার্ড পাওয়ার আগে তাদের নিজ নামীয় কার্ডে অন্য ব্যক্তির টিপসই আছে কিন্তু ১বছর ধরে কোনো চাল পাননি বলে অভিযোগ করেন। নিজেদের কার্ড ন্যায্যভাবে হাতে পেয়ে স্বচ্ছতার সাথে চাল তুলতে পেরে খুবই আনন্দিত বলেও জানান তারা।
যদুনাথনাথপুর ইউনিয়নে এখন তুলনামূলক কম খরচে এবং দ্রুততার সাথে নিয়মিত তাদের প্রয়োজনীয় সনদ পাচ্ছেন বলেও এলাকাবাসী জানান। পাইস্কা ইউনিয়নের এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্মানাধীন পাইস্কা ব্রিজের বাইপাস স্থাপন না করায় নিজে অবস্থান করে তাৎক্ষনিক বাইপাস নির্মান করেন। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে মানবেতরভাবে নৌকা দিয়ে নদী পারাপারকারী এলাকাবাসী নির্বঘ্নে যাতায়াত করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন। একই সাথে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজের এপ্রোচওয়ে তাৎক্ষনিক মেরামত করে দেওয়ায় এলাকাবাসী তাদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
পৌরসভায় সেবা নিতে আসা ধনবাড়ীর চালাষ এলাকার, জাহিদ হাসান, দুরন্ত ও বাজারের শুভ হোড় সহ আরো অনেকে জানান, আগে জম্ম সনদ থেকে সকল সেবা পেতেই অনেক সময় ঘুরতে হতো। এখন এসিল্যান্ড স্যার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পৌরসভার নাগরিকত্ব ও জম্ম সনদ সহ সকল সার্টিফিকেট পেতে দেরি হয়না। আর সরকারী ফিস ছাড়া কোন প্রকার বাড়তি টাকাও লাগে না। এতে আমরা পৌরবাসীরা অনেক খুশি। যদুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা আব্দুল মজিদ আসকের ও শান্ত জানান, যদুনাথপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ফিরোজ চেয়ারম্যান কোনো সেবাই দেয়নি। বরং টিসিবি, গর্ভবতী, টিআর জিআরের সকল কাজে পুকুর চুরি করেছে। বর্তমানে এসিল্যান্ড স্যার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সকল সেবা সঠিক ভাবে পাচ্ছি আমরা। এখন আমরা খুশি সময় মত সঠিক সেবা পাওয়ার জন্য।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সানোয়ার হোসেন জানান, ছাত্র আন্দোলনের সময় কাজ হয়েগেছিলো। তারপর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে সকল কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় সকল কাজ খুবই দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
ধনবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস বলেন, পৌরসভার সকল কাজ কর্ম একযুগে চলছে কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটেনি। দ্রুততার সাথে নাগরিক সেবা দিতে পৌরসভার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান পৌর প্রশাসক ম্যাডাম আন্তরিকাতা ও নিষ্ঠার সাথে সকল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সেই সাথে কাজের গতি ও সেবার মান আরো বেড়েছে।
ধনবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা জানান, ধনবাড়ী উপজেলায় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সকলের সহযোগিতা পেলে কাজ করা আমার জন্য আরও সহজ হবে বলে আশা করছি।