কনক দেব, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
শিবগঞ্জের প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা বৃহস্পতিবার
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামে প্রতি বছর মতো এ বছরও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা।
আগামী ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাংলা ১৪৩১ সনের ১৪ ই কার্তিক অমাবস্যায় শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালীমাতার পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
স্থানীয় হিন্দুদের মতে, এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম এবং বাংলাদেশের বিশেষ কালীপূজা। তিন শত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে এ মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা প্রাচীনতম পূজাগুলোর একটি, যেখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর ভক্তবৃন্দ তাদের মানত দান ও পুণ্য লাভের আশায় জড়ো হন। কেবল দেশে নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও ভক্তরা পূজা দর্শনের জন্য আসেন, যারা মানত হিসেবে পাঠা, কবুতর, ফলমূল, মূখা, পূজার অর্ঘসহ নানা দ্রব্য দেন।
এই পূজায় কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন পাঠা লুট, যেখানে বক্তৃতায় অংশগ্রহণকারী লোকেরা শক্তি খাটিয়ে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করলে পাঠা তাদের হয়ে যায়।
অপরটি হলো থান লুট, যেখানে পূজার স্থান বা প্রতিমার সামনে প্রসাদ ও রান্না করা উষ্ণ প্রসাদের পাতিল সাজানো থাকে এবং পুরোহিত ঘণ্টা বাজালে, যেকোনো প্রসাদ পছন্দ হলে সেটি লুট করতে পারেন। এই কালীর প্রতিমা উচ্চতায় প্রায় ১১.৫ ফুট, যা জমিদার বাড়ি থেকে কাঁধে করে শত শত মানুষ শোভাযাত্রার মাধ্যমে মন্দিরে নিয়ে আসেন।
সাদুল্যাপুরের প্রবীণ ব্যক্তি ও মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতা মন্দিরের বর্তমান ম্যানেজিং সেবাইত নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, আমি বাপ-দাদার আমল থেকে এই পূজা দেখে আসছি এবং জানি যে এই পূজা প্রায় তিন শত পঞ্চাশ বছর আগে মধুসুদন ভাদুরী নামের একজন ব্যক্তি স্থাপন করেন, এবং তার নাম অনুসারে মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতা নামকরণ হয়। পরে মধুসুদন ভাদুরী তৎকালীন জমিদার রমন বিহারী সরকারকে পূজা পরিচালনার দায়িত্ব দেন, এবং তার মৃত্যুর পর রমন বিহারী সরকার নিজস্ব অর্থে পূজা শুরু করেন।
রমন বিহারী সরকারের মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে তাঁর বড় ছেলে রমেশ চন্দ্র সরকার, লব চন্দ্র সরকার, ও কুশ চন্দ্র সরকার দায়িত্ব নেন। বর্তমানে আমি রমন বিহারী সরকারের একমাত্র বড় সন্তান হিসেবে ম্যানেজিং সেবাইত হিসেবে এক যুগের বেশি সময় ধরে এই পূজা পরিচালনা করছি।
পূজা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব প্রভাষক নয়ন সরকার বলেন, এটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালী পূজা, বর্তমানে আমরা এই বংশের পঞ্চম প্রজন্ম হিসেবে পূজা পরিচালনা করছি। পূজা ও তার আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, আশা করছি এই বছর পূজা ভালভাবে সম্পন্ন হবে।
তিনি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সহযোগিতা কামনা করেন। প্রতিমা শিল্পী বিপুল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ, শুধু রং করুন এবং টুকিটাকি কাজ বাকি আছে, তবে সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
উপজেলা বাসিকে শুভ দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানিয়ে শিবগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর দত্ত বলেন, শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা উত্তরের বাংলার মধ্যে একটি বিশেষ পূজা। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং প্রতিবেশী ভারত থেকেও ভক্ত ও দর্শনার্থীরা উপস্থিত হন।
প্রতি বছর এই মেলা ও পূজায় প্রায় ২৫-৩০ হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর উপস্থিতি থাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পূজা সুন্দরভাবে উদযাপনের জন্য পরিচালনা কমিটিকে সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।
পিডিএস/এমএইউ