ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
পৌরসভার বর্জ্য মহাসড়কে
ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার বর্জ্য ময়লা অপসারণের নিদিষ্ট জায়গা না থাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। দীর্ঘ দিন ধরে ময়লা ফেলার কারণে তৈরি হয়েছে বিশাল এক ময়লার ভাগার। এই ভগারের ফলে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তাছাড়া এর দুর্গন্ধ এত বেশি যে নাকে মুখে না বেধে চলাচল করার কোন উপায় নেই। এই অসহনীয় দুর্গন্ধে দুষিত পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বাঁচতে দ্রুত এর প্রতিকার চায় পৌরবাসি।
এদিকে সারা দেশে যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ সে সময় এই ময়লার ভাগার থেকে মশা মাছির উপদ্রপে সৃষ্টি হচ্ছে এডিসের লাভা। যে কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রবণতা। এছাড়াও নানা প্রকার পোকামাকড়ের উপদ্রবে পরিবেশ দুষিত হওয়ার কারণে বাড়ছে শাষকষ্ট ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ডেঙ্গুর মত ভয়ানক রোগের সম্ভবনা। এইসব নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতংকের মধ্যে আছে ময়লার ভাগারের আসপাশে থাকা বাসবাড়িসহ স্হানীয় বাসিন্দারা।
- যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকলে বায়ুবাহিত রোগ বেড়ে যায়।
- হতে পারে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট, পৌরবাসী বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
- প্রথম শ্রেনীতে উন্নিত হলেও এখন পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্মাণ করতে পারেনি কোন বর্জ্য শোধনাগার।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম শ্রেনীতে উন্নিত হলেও দীর্ঘ ২৭ বছরেও এখন পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্মাণ করতে পারেনি কোন বর্জ্য শোধনাগার। যে কারণে ময়লা ফেলার জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় একেক জন একেক জায়গায় ফালায়। তবে বিগত ৪ বছরের অধিক সময় ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছে পৌর কার্যালয়ের কাছাকাছি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে দত্তপাড়া এলাকায়।
খোলা জায়গায় ও মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে চরম বিড়ম্বনায় যাত্রী-চালকসহ সাধারণ পথচারী স্কুলগামী ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে আসপাশের বাসাবাড়িসহ স্হানীয়রা। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ যেন খোলা জায়গায় আর ময়লা না ফেলে দ্রুত বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের ব্যবস্হা করে এই দুষিত পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার দাবি জানায় এলাকাবাসী।
বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে ঘোষিত হলেও বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত কোন স্হানের ব্যবস্থা করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। পরে দীর্ঘদিন যাবৎ ময়লা অপসারণের ব্যবস্হা করতে না পেরে অবশেষে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এর জন্য সাবেক দুই মেয়রকেই দায়ি করছেন পৌরবাসি।
এবিষয়ে পৌর বাসিন্দা এডভোকেট সারোয়ার জাহান বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল পৌরসভা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা শুধু কাগজপত্রেই বাস্তবে প্রথম শ্রেনীর নাগরিক সুবিধার লেশ মাত্র নেই।এদিকে নেই কোন আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্হান। তাই সেই ময়লা ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে, ফলে পরিবেশ হচ্ছে দুষিত ছড়াচ্ছে মারাত্মক দুর্গন্ধ যার ফলে চলাচলেও দ সীমাহীন ভোগান্তি। তিনি আরো বলেন, এই দুর্ভোগ নিরসন কল্পে পৌর কর্তৃপক্ষের উচিৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি ক্রয় করে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করা। তাহলেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তাসনিম মুনমুন জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এই সব ময়লার ভাগাড় থেকেই মশা-মাছির জন্ম হয়। তাছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকলে বায়ুবাহিত রোগ বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া হতে পারে। অচিরেই এর সমস্যার সমাধান না হলে পৌরবাসী বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন বলেন, এ বিষয়ে যত সম্ভব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে স্থানীয়দের সচেতন করা হবে। এ ছাড়া একটি ডাম্পিং জোন তৈরির জন্য শিগগিরই পৌরসভায় একটি বাজেট আসবে বলেও জানান তিনি।