গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে বস্তায় আদা চাষে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন হামিদের
বাড়ির আঙিনায় ৬ শতক জমিতে বস্তায় আদা চাষে বাম্পার ফলনে লাভের স্বপ্ন দেখছেন সিরাজগঞ্জের কৃষক আব্দুল হামিদ। বর্তমানে আদা চাষে কৃষকের মাঝে অনীহার সৃষ্টি হওয়ায় সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রান্তিক কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষ করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পোটল ছোনগাছা গ্রামের মৃত খোদাবক্সের ছেলে কৃষক মোঃ আব্দুল হামিদ বাড়ির আঙিনায় ৬ শতক জমিতে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বাড়ির আঙিনায় ৬ শতক জমিতে ৭৫০ শত বস্তা আদা চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইদুল ইসলামের পরামর্শ ও কৃষি অফিসের সার্বিক সহয়োগিতায় প্রথমে দিনাজপুর মাইজবাড়ি থেকে রোপণের জন্য থাইল্যান্ড ও বার্মা জাতের আদা বীজ সংগ্রহ করি। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আদার বীজ রোপণ করি বেলে-দোআঁশ মাটি, কচুরিপানা, গোবর ছাই ফসফেট ও পটাশ সার দিয়ে মিশ্রণ করে সিমেন্টের বস্তায় ভর্তি করা হয়। এরপর ১০/১২দিন পর প্রতি বস্তার মাঝামাঝি স্থানে ২ থেকে ৩ টুকরো আদা রোপণ করি । আদা গাছ ১ ফুট বড় হলে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে এমিস্টারটপ ও স্ট্রমিন স্প্রে করি। ফাল্গুন মাসে আদার ফলন পরিপূর্ণ হলে আদা উত্তোলন করবো। ১১ মাস পর আদা উত্তোলন প্রতি বস্তায় দেড় থেকে ২ কেজি আদার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, আমি ৭৫০ শত বস্তায় আদা চাষ করার পর আশানুরূপ ফলন ও বস্তার চারপাশে গাছ বেড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে আদা বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যে কিছু বস্তা থেকে আদা তুলে তা বিক্রি করে প্রায় ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। ফাল্গুন মাসে সব আদা তুলবো। আমার আদা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ৬ শতক জমিতে ৭৫০ শত বস্তায় আদা চাষে আমার প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ১১ মাস পর প্রতি বস্তায় দেড় কেজি করে আদা উৎপাদন হলে ১ লাখ টাকা থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার আদা বিক্রির আশায় রয়েছেন আদা চাষী কৃষক।
বস্তায় আদা চাষের বিষয়ে সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরণের জন্য কৃষক আব্দুল হামিদকে মনোনীত করে প্রদর্শনী আদা চাষে বীজ ও সার বাবদ আর্থিক সহয়োগিতা করা হয়। আমাদের সার্বিক সহয়োগিতায় কৃষক আব্দুল হামিদ আদা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এত দেড় থেকে ২ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকের আদা চাষে উদ্ধুদ্ধকরণে উন্নত প্রযুক্তিতে আদা চাষে সরকারিভাবে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ প্রদানে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে। এখন উল্লেখিত, হামিদ ছাড়াও চর রায়পুর গ্রামের আশরাফ আলী, বনবাড়ীয়া গ্রামের জাবেদ আলী ও মেছড়া আজিজ মন্ডল সহ অনেকেই আদা চাষ করে চলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোঃ মশকর আলী বলেন, ২০২৪ -২৫ অর্থবছরে জেলায় জমিতে আদা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৫৫ হেক্টর, এ বছর আবাদ হয়েছে ১৭২ হেক্টর ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩২২ টন। জেলায় আদা চাষে বস্তার সংখ্যা ৫৭৮৯৭টি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪৫ টন। খাদ্য রান্নায় আদার চাহিদা ব্যাপক। আদা ওষুধি গুণাগুণও অতুলনীয়, যা মানব দেহের উপকারী। বর্তমানে দেশি আদা চাষ কমে যাওয়াই থাইল্যান্ড ,মিয়ানমার ও ভারতীয় আদার কদর বেড়ে গেছে। আদা এখন উচ্চ দামে কিনতে হয় । আদা চাষে কৃষকের অনীহার কারণে বস্তায় আদা চাষে তাদের উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। বস্তায় আদা চাষে ফলন ভালো হলে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি মুনাফা অর্জিত হবার সম্ভাবনায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পিডিএস/এমএইউ