সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ

  ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

বছরে বিক্রি ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা

মুন্সীগঞ্জে শীতকালীন শাকসবজি চাষে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকের

মুন্সীগঞ্জের ভট্টাচার্যেরবাগ এলাকায় একটি সবজি চারা জমিতে পরিচর্চা করছেন চারা উৎপাদনকারী কৃষক। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মুন্সীগঞ্জে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদে এখানকার কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন তারা নিজস্ব জমি পরিচর্চা করছেন এবং সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন শাকসবজির চারা রোপণ করতে শুরু করেছেন। তাই এ জেলায় এখন ব্যাপকভাবে শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন এবং প্রচুর বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে চারা বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও। দাম ও চাহিদা খুব বেশি। ফলন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এক একটি বীজতলায় ৩-৪ বার চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি চারা উৎপাদন হয়। আর এই শীতকালীন সবজি চারা যা প্রতিবছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা বিক্রি হয়ে থাকে।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সৃত্রে জানা গেছে, শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জ দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এখানকার চারা অন্য জেলার চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার অন্তত ৪০ জন কৃষক শীতকালীন লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রোকলি চারা উৎপাদনের সাথে জড়িত। এই উৎপাদিত চারা প্রতিবছর বিক্রি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সৃত্রে জানা যায়, চলতি বছর মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৪ হাজার ৯শ’ ৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪শ’ ২৩ মেট্রিকটন।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কর্মকর্তা রনি দাস বলেন, শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন লাভজনক পেশা। কয়েকটি এলাকার কৃষক চারা উৎপাদনকে প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চারা উৎপাদনে জৈবসার ও খৈল ব্যবহার করা হয়। এ কারণে চারার গুণগত মান ভালো। বেশি ফলন ও লাভের জন্য সাভার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাদপুর, বরিশাল, শরিয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সবচেয়ে ৭৭৭, সিরাযুথি, হিমাযুথি, ফ্রেস, স্নো হায়াইট, মারবেল, কার্তিকা, ষাইটশা, চালানি ষাইটশা জাতের কপি চারা নিচ্ছেন কৃষকরা।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার , রামপাল,বণিক্যপাড়া,রামশিং,বজ্রযোগিনী, দেওয়ান বাজার, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুলাহপুর বেকতা , সোনা রং গ্রামে ঘুরে দেখা যায় সেখানকার উচু জমি গুলোতে বীজতলা বানিয়ে সবজির চারা আবাদ করা হচ্ছে। এসকল শীতকালীন সবজি চারা রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য উপরে বাশের বেড়া দিয়ে ঢেকে রাখা রাখা হয়েছে। এসব বীজতলার কোনটিতে চারা গুলোর মধ্যে দুয়েকটিতে পাতা গজিয়েছে। কোনটায় বিক্রির উপযোগী হয়েছে। কোনোটায় নতুন চাষ করা হচ্ছে। আবার কোন বীজতলার বিক্রি উপযোগী চারা থেকে আগাছা বাছাই করে বিক্রির জন্য উঠানোর কাজ করছিলেন কৃষক ও শ্রমিকরা।

সরেজমিন পঞ্চসার ইউনিয়নের বণিক্যপাড়া এলাকায় ঘুরে ঘুরে কথা হয় সবজি চারা উৎপাদনকারীদের সাথে। এমন একজন হারুন মিয়া বলেন, ২৫ বছর ধরে চারার চাষ করি। আমাদের চারার চাহিদা খুব বেশি।মানও ভালো। তাই কখনো চারা চাষে লোকসান হয়নি। ভট্রাচার্যেরবাগ এলাকার সোহেল বলেন, সবজি চারা চাষ পরিশ্রম বেশি হলেও লাভ বেশি। গত ১০ বছর অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করছি। সবজির চেয়ে চারা উৎপাদনে প্রচুর লাভ। এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে চারার আবাদ করছি।

এদিকে সবজি চারা উৎপাদনকারীরা জানান, প্রতিবছর আগষ্টের মাঝামাঝি চারা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়। ডিসেম্বর পযর্ন্ত চারা উৎপাদন হয়।বীজ বোনা থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা বিক্রি করা হয়। প্রতি হাজার চারা ১২শ’ থেকে ১৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুম এক একটি বীজতলায় ৩-৪ বার চারা উৎপাদন করা হয়। প্রতি মৌসুম প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি চারা উৎপাদন হয়। আর এই শীতকালীন সবজি চারা যা সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা বিক্রি হয়ে থাকে।

এদিকে, পঞ্চসারের আমির হোসেন বলেন, আগস্টের মধ্যভাগে ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি ফুলকপি, বাধাকপি চারা চাষ করেন।এতে তার ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সে চারা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে তার।আরও ৩ বার তার জমিতে চারা চাষ করা হবে। এতো সব খরচবাদে তার ৫ লাখ টাকার মতো আয় হবে।

রামপাল ইউনিয়নের জোড়ারদেউল গ্রামের কৃষক হুমায়ন মিয়া জানান, চারা উৎপাদন কাজ খুব পরিশ্রমের, তবে লাভও খুব বেশি। প্রতিবছর তিনি ১৫-২০ লাখ টাকার ফুলকপিও বাধাকপির চারা বিক্রি করেন।এতো সব খরচের পরও প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা লাভ হয় তার। দেওয়ান বাজার এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, তিনি ৩৫ শতাংশ জমিতে এবার ফুলকপি,বাধাকপি ও ব্রাকলি চারা চাষ করেছেন।এতে তার ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।তার উৎপাদিত চারা গুলো সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন তিনি।প্রতি বছর কৃষকরা চারা উৎপাদন পেশার সাথে যুক্ত হচ্ছে। অনেকেই বংশপরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে এ সবজি চারা উৎপাদন পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন বলেন তিনি।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এই বিষয়ে বলেন, শীতকালীন সবজি চাষ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।এর প্রাথমিক পযার্য়ে হিসাবে ব্যাপক চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব চারা জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। চারা বিক্রির সাথে জড়িত কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এসব চারার গুণগত মানও ভালো। যে সব কৃষক ভালো ফলন চান, তারা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এই সবজির চারা নিয়ে আবাদ করতে পারেন।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুন্সীগঞ্জ,শাকসবজি,চাষাবাদ,কৃষক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close