হায়দার আলী, পঞ্চগড়
পঞ্চগড় সদর
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ১৮ বছরেও হয়নি সেতু
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি-ধনিপাড়া সড়কে টাংগন নদীর ওপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি সেতু নির্মাণ। এতে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাশের প্রায় ১৮টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি-ধনিপাড়া সড়কে টাংগন নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট। কিন্তু ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ১৮ বছরেও সেতু তো হয়নি বর্তমানে ভিত্তি প্রস্তরেরও ভিত্তি নেই।
এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, নদীর ওপারে (পূর্বপাশে) রয়েছে মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, দলুয়া হাট, ইউনিয়ন সমাজকল্যান ফেডারেশন, মাগুড়া দারুল উলুম ফারুকিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা, মাগুড়া প্রধান পাড়া দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এই লাখেরাজঘুমটি-ধনিপাড়া সড়কের ধনীপাড়া এলাকায় এক নম্বর ওয়ার্ডবাসীর চিকিৎসাসেবার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান ধনীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে এলাকার মানুষকে ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নদী পার হয়ে ৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে ওপারে যেতে হয়। এ ছাড়া নদী পার হয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার মোহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট এখানে একটি সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু সেতু তো হয়নি বর্তমানে ভিত্তি প্রস্তরেরও ভিত্তি নেই।
১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ২০০৬ লাখেরাজ ঘুমটি এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। ওই সময় আমি ইউপি সদস্য ছিলাম। কিন্তু পরে আর সেখানে সেতু হয়নি।
লাখেরাজ ঘুমটি গ্রামের নুর নেহার বলেন, নদীর পূর্বপাশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। অনেক মহিলা অসুস্থ হওয়ার পরেও নদী পার হয়ে নদীর পূর্ব পাশে চিকিৎসা নিতে যেতে পারে না। এখানে সেতু হলে সহজে চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে পারবে।
একই গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৬০) বলেন, নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে মাগুড়া ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া, নতুনবস্তি, মধ্যপাড়া, সন্তরাপাড়া, ঘুমটি প্রধান পাড়া এবং আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা, উত্তর পানবারা এবং মালিগাও। এ ছাড়া সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের কাশিমপুর, মন্ডলপাড়া, নতুনবস্তি, গোয়ালপাড়া। এসব এলাকার ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে। এখানে সেতু হলে সকলে এর সুফল পারে। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক
গরিনাবাড়ী ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আব্দুল মান্নান বলেন, নদীর পূর্বপাশে ধনিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানে প্রতি রবিবার আমাকে যেতে হয়। লাখেরাজ ঘুমটি এলাকায় সেতু না হওয়ায় আমাকে অনেকটা রাস্তা ঘুরে ক্লিনিকে যেতে হয়। এখানে সেতু হলে অল্প সময়ে ক্লিনিকে যেতে পারব। এলাকায় একটি সেতু হলে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও সহজে ধনিপাড়া ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে পারবে।
মাগুড়া প্রধান পাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাখেরাজ ঘুমটি গ্রামের নিলুফা জান্নাত বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেশি থাকায় প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে আমাকে মাগুড়া প্রধান পাড়া স্কুলে যেতে হয়।
মাগুড়া প্রধান পাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেম বলেন, নদীর ওপারে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসে। নদীর ওপর সেতু হলে সহজে স্কুলে আসতে পারবে তারা। কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পঞ্চগড় সদরের উপসহকারী প্রকৌশলী কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ওইখানে সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত অত্র অফিসে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আমি আপনার মাধ্যমে সেতু নির্মাণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারলাম। আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করাবো।
পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ জামান বলেন, ঘুমটি-ধনিপাড়া সড়কে টাংগন নদীর ওপর সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য অত্র অফিসে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জানলাম। সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।