হামিদুর রহমান, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)
মাধবপুর সীমান্তে সক্রিয় মানবপাচার ও দালাল চক্র
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে মানবপাচার ও দালাল চক্র।
ভারতে নির্বিঘ্নে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিরীহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ,সাধারণ মানুষ,রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ২৫ ব্যাটালিয়ন সরাইল এবং ৫৫ ব্যাটালিয়ন হবিগঞ্জ এর অধীন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সক্রিয় রয়েছেন তারা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানো ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দালাল চক্র ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতিজন মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা নিচ্ছে। আর নগদ টাকা বা সম্পদ নিয়ে গেলে সেই টাকা বা সম্পদের ১০-২০ শতাংশ আদায় করে নিচ্ছে দালাল চক্র। প্রথমে তারা সীমান্তের বিভিন্ন বাড়িতে তাদের জড়ো করে রাখছে এবং সুযোগ বুঝে ভারতে পাচারের অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। অনেককে সীমান্তে এনে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে ছেড়েও চলে গেছে দালাল চক্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫ জন নারী, পুরুষ ৩ শিশুসহ ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা এবং হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা থেকে মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের ১৯৯৭ পিলার এর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সন্তোষপুর সীমান্তে নিয়ে আসে দালাল চক্র। পরে তাদের উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের সন্তোষপুর সীমান্ত থেকে ধর্মঘর সীমান্ত ফাঁড়ির হাবিলদার মোশারফ হোসেন এর নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা ৫ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হল সোনাকান্ত দাস-(৬০) পিতা: মৃত কাঁচা রামদাস, ছায়া দাস (৭০) স্বামী: মৃত রাকেশ দাস, সতী দাস (২৭), স্বামী: দীপেশ দাস, অমল চন্দ্র দাস (৩৫), পিতা: মৃত নির্মল চন্দ্র দাস, গীতা রানী দাস, (৩০) স্বামী:-অমল চন্দ্র দাস। অনুরূপ গত ২২ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুপ্রবেশের সময় মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের সন্তোষপুর সীমান্ত থেকে ৬ জনকে বিজিবি আটক করে। এভাবে মাধবপুরের বিভিন্ন সীমান্তে মানবপাচার ও দালাল চক্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সাধারন নাগরিক, রাজনীতিবিদকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে বিপদে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে। মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে বিলাসবহুল গাড়িসহ (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৭-৮৫১১) সন্দেহভাজন দুজনকে জনতার সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে সুরমা চা বাগানের ১৯ নম্বর সেকশন থেকে গাড়িসহ তাদের আটক করা হয়। বিলাসবহুল গাড়ির মালিক কুমিল্লার সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার কথিত দেবর রুবেল মিয়া বলে দাবি করছেন স্থানীয় লোকজন।
আটককৃতরা হলেন- বিলাসবহুল গাড়ির চালক কুমিল্লা সদরের রহিমপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে তপু মিয়া (২৫) ও একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. ইমন মিয়া (২২)। স্থানীয়দের ধারণা ওই বিলাসবহুল গাড়ি দিয়ে কোনো ভিআইপি আওয়ামী লীগের নেতা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে গেছে নতুবা পালানোর চেষ্টায় ছিল।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, পাহাড় ও চা বাগানবেষ্টিত মাধবপুর উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণ এলাকা ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা নির্জন ও নিরাপদ। এখান দিয়ে অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের (সরাইল) অধিনায়ক লেঃ কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সবসময়ই সতর্ক রয়েছে বিজিবি সদস্যরা। সকলকে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করার আহবান জানান তিনি।
পিডিএস/এমএইউ