তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া
কম্পিউটার প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বি সীমান্তঘেঁষা গ্রামের তরুণেরা
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আহনাফ কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের শিক্ষিত তরুন-তরুণীরা স্বাবলম্বি হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক বছরে প্রায় ৫ হাজার বেকার ছাত্র-ছাত্রীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পর শিক্ষিত বেকারা ছেলে মেয়েরা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, তিনদিকে সীমান্তঘেঁষা উপজেলা তেঁতুলিয়ায় ২০০০ সালে একটি মাত্র কম্পিউটার পিসি দিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শুরু করে। বর্তমানে প্রায় ১০টি ল্যাপটপ ও ১০টি পিসি দিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত হয়ে বেসিক ট্রেড (৩৬০ ঘন্টা) শর্ট (সংক্ষিপ্ত) কোর্স পরিচালনা করছে আহনাফ কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরে সীমান্তঘেঁষা গ্রামের গরীব কৃষকের ছেলে-মেয়েদের ক¤িপউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তির আলো ছড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ২০০২-০৩ সালে পঞ্চগড় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রাথমিক ৬ মাস কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন উপজেলা পরিষদে পল্লী বিআরডিবি হলরুমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালুল জন্য একটি কক্ষ প্রদান করেন। ওইখানে পঞ্চগড় বিসিই-এর পরিচালক বাবুল হোসেন এর সহযোগিতায় দুইটি কম্পিউটার দিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু করেন। প্রথম ব্যাচে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য বিশ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পঞ্চগড় শাখা বিসিই’র বাবুল হোসেন এবং বিসিই’র শিক্ষার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন কম্পিউটার ক্লাস নেন। এভাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকে। ২০০১ সালে ঘড়ি ব্যবসায়ী এমদাদুল হক ও আনছারী কমার্শিয়াল ইনিস্টিটিউট এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম আনছারী সহযোগিতায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কলেবর বৃদ্ধি করেন। তখন প্রতিষ্ঠানটি আনছারী কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট উলিপুর, শাখা হিসেবে ‘জেনুইন কম্পিউটার কমপ্লেক্স ট্রেনিং এন্ড কম্পোজিং সেন্টার’ নামে পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শর্টকোর্স পরিচালনার অনুমতি প্রাপ্ত হলে জেনুইন কম্পিউটার কমপ্লেক্স নামটি পরিবর্তন করে ‘আহনাফ কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ কযেক বছরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারে প্রায় ৫ হাজার বেকার ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের পর শিক্ষিত বেকারা যুবক ও যুবরা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছে।
বোয়ালমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো. রহমত আলী বলেন, এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে আমার মতো এলাকার কয়েক শতাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক ও নারীদের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।
তেঁতুলিয়া সরকারি কলেজের লাইব্রেরিয়ান (অব:) মো. শাহাদৎ হোসেন রঞ্জু বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালু হলে এলাকার অন্যান্য গরীব কৃষকের ছেলে মেয়ের প্রশিক্ষণে আগ্রহী হবে।
আহনাফ সিটিআই পরিচালক এম এ বাসেত বলেন, প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখতে অনেকটা চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সীমান্তঘেঁষা গ্রামের শিক্ষিত কিশোর-কিশোরীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্ম-নির্ভরশীল হিসেবে গড়া তোলার ভূমিকা পালন করছি। সরকারিভাবে আইসিটি প্রজেক্ট অত্র প্রতিষ্ঠানের অধীনে গরীব শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ নাগরিক তৈরি হবে।