কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

  ০২ অক্টোবর, ২০২৪

তথ্য গোপন করে দুই বিদ্যালয়ে শিক্ষক, তুলছেন বেতন-ভাতা

কুড়িগ্রামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাজু আহমেদ নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) সুপারিশ পেয়ে ওই শিক্ষক দুইটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এ ঘটনায় চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষক রাজু আহমেদের নামে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক আশরাফি বিনতে ইসলাম।

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, শিক্ষক রাজু আহমেদ ২০১৮ সালে এনটিআরসিএ’র দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে এমপিওভুক্ত হন। এদিকে ২০২১ সালে তিনি এনটিআরসিএ-র একই সদনে পূর্বের ইনডেক্স নম্বর গোপন করে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত কর্মরত অবস্থায় সব অভ্যন্তরীণ বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। অভিযোগকারী ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক আশরাফি বিনতে ইসলাম বলেন, ‘রাজু আহমেদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষক আমাকে দুই বছর থেকে মানসিক হেনস্তা করছেন। অথচ তিনি তথ্য গোপন করে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক জানান, রাজু আহমেদ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত। সেখানে ইস্তফা না দিয়ে তিনি কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে যোগদান করেছেন। কিন্তু গত মে মাস থেকে তিনি কোনো ছুটি ছাড়াই উধাও হন। পরে জানা যায় তিনি পূর্বের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। কিন্তু এই স্কুলের ক্লাস রুটিন, হাজিরা খাতাসহ সমস্ত কাগজপত্রে তার নাম রয়েছে। তিনি এখান থেকেও পদত্যাগ করেননি। আশরাফিসহ অন্যরা তার ক্লাস চালান। প্রধান শিক্ষকে সঙ্গে তিনি আর্থিক চুক্তি করে এমন অনৈতিক সুবিধা নিতে পারেন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে শিক্ষক রাজু আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে রিভার ভিউ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকই ভালো জানেন। আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করেন।’ পরে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক রাজু আহমেদ অন্য স্কুলে চাকরি করেন, এটা আমার জানা ছিল না। এ কথা প্রথম শুনলাম।’ পরে তিনি ‘ব্যস্ততা’ দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘একই ব্যক্তি দুইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির করার কোনো নিয়ম নেই। যদি করে থাকে ও বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলের সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. পূবন আখতারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই, জেনে এ বিষয়টি মন্তব্য জানাব।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close