মোঃ শাহাদাত হোসেন
শ্রেণী বৈষম্যের স্বীকার ৪ বছর মেয়াদী ডেন্টাল ডিপ্লোমাধারী'রা
প্রান্তিক অঞ্চলের জনসাধারনের দন্ত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের মাধ্যমে ডেন্টাল কোর্সের ডিপ্লোমা চালু হয়। এই ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্নকারীরা সরকারী পর্যায়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সেবা দিয়ে আসছে। এমনকি বিভিন্ন প্রান্তিক, হাওড়, চরাঞ্চল কিংবা দূর্গম এলাকায় যেখানে ডেন্টাল সার্জন নেই, সেখানেও সেবা প্রদান করে আসছে।
১৯৬৩ সালে কোর্সটি শুরু হলেও যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। দীর্ঘ কয়েক যুগেও মিলে নি বিএমডিসি হতে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রেজিষ্ট্রেশন। অথচ সম যোগ্যতা সম্পন্ন এবং একই সাথে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্টদের বিএমডিসি হতে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করা হলেও ডিপ্লোমা ডেন্টালদের তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এদিকে ডিপ্লোমা ডেন্টালদের বিএমডিসি হতে ১৯৮২ সালে ১০০/- টাকা ফি'র বিনিময়ে প্রাইভেট প্র্যাক্ট্রিস রেজিষ্ট্রেশন প্রদানের জন্য বিএমডিসি'র কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হলেও অদৃশ্য এবং শ্রেণী বৈষম্যের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি চালাচালি হয় দীর্ঘ সময়। এরপর ডিপ্লোমা ডেন্টাল ডিগ্রিধারীদের কে প্রাইভেট প্র্যাক্ট্রিস রেজিষ্ট্রেশন প্রদানে আইনী কোন জটিলতা আছে কিনা তা জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতে, কোন আইনি বাধা নেই মর্মে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কে আইন মন্ত্রণালয় চিঠি প্রেরণ করে। এই ভাবেই চলতে থাকে চিঠি চালাচালি।
দীর্ঘ কয়েকযুগেও এর কোন সুরাহা না পেয়ে ২০১৬ সালে মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করা হয়। দীর্ঘ শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড কাউন্সিল (বিএমডিসি) কে আইন সংশোধন করে ডিপ্লোমা ডেন্টাল ডিগ্রিধারীদের প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করার জন্য আদেশ প্রদান করেন এবং তা ৩০ দিনের ভেতরে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে আপিল করা যায় কিনা তা জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়। তারই আলোকে সলিসিটর অনুবিভাগ তাদের মতামতে উল্লেখ করেন, এই রায়ের আলোকে আপিল করা হলে সরকারের অর্থ এবং সময় উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বরং তা না করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাস্তবায়ন করাই শ্রেয় হবে বলে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কে পত্র দিয়ে জানিয়ে দেন। এদিকে, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের প্রদত্ত মতামত কে কোন প্রকারের তোয়াক্কা না করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, সরকারের আর্থিক ক্ষতি করার নিমিত্তে বিএমডিসি আপিল দায়ের করেন। পরে চেম্বার কোর্টে মহামান্য হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গে বেঞ্চে তা প্রেরন করেন।
এই দিকে, আইন মন্ত্রনালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের প্রদত্ত মতামতের আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে বারবার আবেদন করা হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কোন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করে কখনো কখনো বিএমডিসি তে চিঠি প্রদান করেন। আর এদিকে বিএমডিসি আইন মন্ত্রনালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের মতামত কে কোন প্রকারের গুরুত্বই দিছে না। এভাবে দীর্ঘ জটিলতায় আটকে আছে ডিপ্লোমা ডেন্টাল ডিগ্রিধারী প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রেজিষ্ট্রেশন।
দীর্ঘ এই জটিলতার বলি হচ্ছে, সাধারণ ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীগণ। একদিকে বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা, অন্যদিকে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্নতা, এ যেন এক দূর্বিসহ অবস্থা। অথচ দেশে প্রচলিত অন্যান্য ডিপ্লোমাধারীদের ক্ষেত্রে পেশাগত এত হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে দ্রুত সুরাহার জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ হতে জরুরী।
মোঃ শাহাদাত হোসেন
সাবেক সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদ,
নোয়াখালী জেলা শাখা।