মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা)
আন্দোলনে আবুলের লাশ পুড়িয়ে দেয় পুলিশ, বিপাকে পরিবার
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান আবুল হোসেন (৩৪)। পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। তাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবার। এতিম হয়ে যায় অবুঝ দুটি শিশু। একটির বয়স ১০ বছর, অপরটির ৭ মাস।
বড় ছেলে বাবাকে হারানো কিছুটা বুঝলেও কোলের শিশুটি বাবার আদর বুঝে উঠার আগেই এতিম হয়ে যায়। শিশুটিকে নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তার সদ্য বিধবা স্ত্রী লাকী আক্তার। ছেলে দুটির অনিশ্চিত ভবিষ্যত আর মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকায় দুঃখের সাগরে ভাসছেন আবুলের স্ত্রী।
নিহত আবুল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাল এলাকায় থাকতেন। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। প্রাণে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা, তার লাশের সাথে আরো ৬টি লাশ ভ্যানে তুলে থানার সামনেই আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে দরিদ্র পরিবারে জন্ম আবুলের। দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম আবুলের গ্রামে থাকার জায়গাটুকুও নেই। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় চলে যান। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে দিনমজুর আবুল হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর তার স্বজনরা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের চাপে বাধ্য হয়ে জিডি নেয় আশুলিয়া থানা পুলিশ। তারপর ২৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ। সেই ভিডিওতে গায়ে পড়া ব্রাজিলের জার্সি ও লুঙ্গি দেখে আবুল হোসেনকে শনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শনাক্ত করলেও লাশটি আর কপালে জোটেনি তাদের। কারণ লাশ যে নির্দয় পুলিশ সদস্যরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, আমার অবুঝ দুই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন কে নেবে। তাদের ভবিষ্যৎ কী। আমি গ্রামে চলে আসছি এখানে বাচ্ছাদের নিয়ে থাকার মতো কোনো ঘর নেই। আমার জন্য একটি ঘর ও আয় রোজগারের ব্যবস্থা করার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চাই। আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিয়েছে তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হউক, আমার সন্তানরা শহীদের সন্তান হিসেবে সমাজে বেড়ে উঠুক।
আবুল হোসেনের মা সালমা আক্তার বলেন, আমি ১০ মাস গর্ভে ধারণ করে তাকে জন্ম দিয়েছি। সে আমার প্রথম সন্তান। তার লাশটাও বুকে জড়িয়ে ধরা আমার নসিব হলো না। পুড়িয়ে দিল আমার কলিজার লাশটাকে। এই কষ্ট কারে দেখামু বাবা, এই কষ্ট আমি কারে দেখামু।
আবুল হোসেনের বাবা মনির মিয়া বলেন, আমার ছেলের মতো আরো বহু মায়ের সন্তানকে হত্যা করেছে জালিমরা। আমি আমার সব সন্তান হত্যার বিচার চাই।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবুল হোসেনের পরিবারকে দ্রুত সহযোগিতা করা হবে। আমরা তাদের পাশে থাকব।