হামিদ রনি
৭ বছর ধরে পলিথিনে মোড়ানো ঘরে বসবাস; পাশে দাঁড়ালো ছাত্রনেতা রাসেল
কয়েকটি বাঁশের সাথে টুকরো টুকরো পলিথিন দিয়ে ঘেরা একটি ঘর। সেখানে থাকেন আজিমা খাতুন নামে এক অসহায় নারী। তার সাথে বসবাস করছে ৭ বছরের শিশু সন্তান মো: হোসেন। শীতের তীব্রতা আর গ্রীষ্মের প্রখরতা এবং বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে বাধ্য হয়েই কোন রকম দিনাতিপাত করছে এ অসহায় মানুষটি। সামান্য বৃষ্টিতে যেখানে বসার কোন পরিস্থিতি থাকে না, সেখানে শোয়া তো দূরের কথা। অপরদিকে নেই পানির টিবওয়েল, বাথরুম বা অন্য কোন সুযোগ-সুবিদা। চতুর্দিকে বন্যার পানি থইথই করছে। এমন পরিত্যক্ত এক স্থানে এভাবেই খেয়ে না খেয়ে ছোট্র শিশু সন্তান কে নিয়ে মানবেতর দিন পার করছে অসহায় ও হতদরিদ্র আজীমা খাতুন।
বলছিলাম নোয়াখালী সদর উপজেলার ৫নং বিনোদপুর ইউনিয়নের নলপুর গ্রামের ১ নং ওয়ার্ড মজিদ ব্যাপারী বাড়ির অসহায় ও মানসিক প্রতিবন্ধী আজিমা খাতুনের কথা। তার এমন করুন অবস্থার কথা শুনে সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসা সহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও তাদেরকে একটি ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন নোয়াখালী সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সভাপতি পদপ্রার্থী এন.বি.এন রাসেল। নোয়াখালীর স্থানীয় সাংবাদিক জুয়েল রানা লিটনের মাধ্যমে আজিমা খাতুনের বিষয়টি বেশকিছু জাতীয় গণমাধ্যম ও স্থানীয় অনলাইন টেলভিশন ’নোয়াখালী টিভি’তে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর আজিমা খাতুনের খোঁজ নিতে সরেজমিনে যান ছাত্রনেতা এন.বি.এস রাসেল সহ তার দল।
নোয়াখালীতে বর্তমান চলমান বন্যার পানি সদর উপজেলা সহ আজিমা খাতুনদের এলাকা এখনো পানির নিচে ডুবে আছে। হাঁটু ও কোমর পরিমান পানি এবং বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে বহুকষ্টে আজিমা খাতুনের বাড়িয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের আশপাশে পানি থইথই করছে। বৃষ্টিতে ভেজা কাঁথা ও জামাকাপড় উঠোনে শুকাতে দিয়ে ছেঁড়া পলিথিন দিয়ে মোড়ানে ঘরে মা-ছেলে জড়োসড়ো হয়ে বসে ঠান্ডায় কাঁপছে। ঘরের ভেতরে পরিস্থিতির গরুর গোয়াল ঘরের থেকেও আরও খারাপ অবস্থা। আর এমন অবস্থার মধ্যে দীর্ঘ ৭ বছর বসবাস করে আসছে আজিমা খাতুন ও তার সন্তান মো: হোসেন!
আজিমা খাতুনের পিতা মোহাম্মদ উল্যাাহ অনেক আগেই মারা যান। মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় সন্তান সহ আজিমা কে রেখে চলে যায় তার স্বামী। তার ঘরের পাশেই আরেকটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করছে আজিমা খাতুনের ৭০ বছরের বৃদ্ধ মা নুরজাহান বেগম। মায়ের দেখাশোনা করছে আজিমার বড়বোন ও স্বামী পরিত্যাক্তা তাসলিমা বেগম। তাদের পরিবারের আয় করার মতো কেউ নেই। ফলে আশেপাশের মানুষ যদি কিছু সাহায্য সহযোগিতা করে কোনরকম দু'মুঠো ডালভাত খেয়ে দিন পার করছে, আর না হয় উপোস থেকে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে তারা।
আজিমাদের দেখতে যাওয়া ছাত্রনেতা এন.বি.এস রাসেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন মানবেতর জীবনযাপন করা মানুষরা যদি একটি থাকার ঘর না পায়- তাহলে বিগত সরকারের এতো উন্নয়নে ও গৃহহীনদের জন্য করা ঘর কাদের কে দেওয়া হয়েছে! তিনি বলেন, আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করবো এই পরিবারটির পাশে থাকতে। এসময় তাদেরকে থাকার একটি ঘর করে দেওয়ার ঘোষনা দেন তিনি।
তবে স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করছেন, যেহেতু আজিমা খাতুন এবং তার বৃদ্ধ মা ও স্বামী পরত্যিাক্তা আরেক বোন সহ সকলেই মানবেতর জীবনযাপন করছে, সে হিসেবে ছাত্রনেতা রাসেল’র পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান এবং মানবিক মানুষরা এগিয়ে আসলে আরও ভালোভাবে একটি পরিপূর্ণ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া যাবে। যাতে করে আজিমা খাতুন, তার বৃদ্ধ মা সহ পুরো পরিবার সুন্দরভাবে বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারে।
তাদেরকে ঘর করে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা সহ সার্বিক বিষয়গুলো তদারকি করছে নোয়াখালীর সামাজিক ও স্বেচ্চাসেবী সংগঠন “নোয়াখালী ইয়ুথ ফোরাম”।