কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি :
কোম্পানীগঞ্জে হস্তান্তরের আগেই খসে পড়ছে বীর নিবাসের পলেস্তরা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুই বছর আগে ঘরের নির্মাণকাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি একাধিক ঘরের নির্মাণ কাজ। উল্টো ঘর নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ইট, সিমেন্ট, বালু ও টাকা দিতে বাধ্য করার অভিযোগও উঠে এসেছে। একাধিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বাধ্য হয়ে রান্নাঘরেই রাত যাপন করতে হচ্ছে। উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হকের পরিবারের সাথে কথা বলে এবং তাদের নির্মানাধিন বীর নিবাস ঘুরে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের ছেলে নজরুল ইসলাম টিপু অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের ইট দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক ও কলঙ্কের বিষয়। দুই বছর যাবৎ চলে আসা ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে ৬ মাস। সিমেন্টের পরিমান কম এবং বালুর পরিমান বেশি দেয়ায় নির্মান শেষ হওয়ার আগেই খসে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তরা, ছাদ ঘেষে দেয়াল ঘেমে বৃষ্টির পানি ডুকছে বীর নিবাসে। যেকোনও সময় ছাদ ধসে পড়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পরিবারের মাঝে।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হকের ছেলে নূরুল আবছার রাসেল অভিযোগ করে জানান, ইট, বালু ও সিমেন্ট নিম্নমানের ব্যবহার না করতে লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে তাকে। নিজ হাতে বালু ছেঁকেদেয়া, কংক্রিট ধুয়ে দেওয়া সহ যাবতীয় কাজ করে দিতে হয়েছে তাকে। এছাড়াও নির্মান কাজে আসা প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতিদিন নাস্তা ও দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাধ্য করার কথাও জানান তিনি। এতকিছুর পরও দুই বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাসের নির্মান কাজ। নগদ টাকা ও বাড়তি সাপোর্ট দিয়েও মানসম্মত ভাবে তৈরি হচ্ছেনা মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীর নিবাস। ঘরের বাজেট নিম্নমানের উল্লেখ করে ঠিকাদারের সাথে স্বমন্বয় করতে বলেছেন বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগিরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা মোঃ যোবায়ের হোসেন বলেন, স্বমন্বয় করার কথাটি সঠিক নয়। কোনো ঠিকাদার বা সংসৃষ্ট কারো সাথে টাকা লেনদেনসহ মেস্তরিদের নাস্তা ও দুপুরের খাবার খাওয়ানোর মত কাজ না করতে অনুরোধ করা হয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কে। অতি উৎসাহি হয়ে যদি কেউ এসব করেন তার জন্য তারাই দায়ী। তবে অভিযোগকারীদের ঘর যেহেতু এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি, বুঝিয়ে দেয়ার পূর্বে সমস্যা গুলো সমাধান করে দেয়ার কথা জানান মোঃ যোবায়ের হোসেন।
বীর নিবাসে অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী জানান, অসম্পূর্ণ কিছু কিছু ঘরে তাদের ছোট ছোট কিছু অভাব অভিযোগ আছে, তবে আমি সবগুলো ঘরে যেতে না পারলেও যেগুলোতে যেতে পেরেছি এমন অনিয়ম দেখিনি। অভিযোগ থাকলে সেটি সমাধান করে দেয়া হবে।
জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। দরপত্র আহ্বান করা হলে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত হন পাঁচ জন। এদের সকলেই আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ায় এই মুহুর্তে পলাতক আছেন। এছাড়াও অধিকাংশ বীর নিবাসের ঠিকাদারের হাত পরিবর্তন হয় ৩/৪ বার। প্রতি হাতেই ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হওয়ায় ঠিকাদারকে নিম্নমানের কাজ করতে হচ্ছে।