এম এ সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)
আমতলীতে সাবেক যুবদল নেতাকে কোপালেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
বরগুনার আমতলীতে একটি খালের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে। আহত মোমেন আকন (৩৬) উপজেলার বৈঠাকাটা গ্রামের আব্দুল মন্নান আকনের ছেলে। তিনি চাওড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক। অভিযুক্ত মাহাবুব ব্যাপারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তার বাড়ির উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের মধ্য চন্দ্রাগ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া জলমহালে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করছেন ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুব ব্যাপারী। মাছ বিক্রির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে ওই খালের মাছ ধরেন তারা। বিষয়টি যুবদল নেতা মোমেন আকনকে ফোনে জানান চাওড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা সফেজ প্যাদা। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দু-তিনজন কর্মী নিয়ে খালের চানমিয়া সর্দারের পাড়ির সামনে উপস্থিত হন যুবদল নেতা মোমেন। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মাহবুব ব্যাপারীর নেতৃত্বে কয়েকজন মোমেন আকনকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন। এতে মোমেনের বাম চোখ, দুই পা-হাত ও উড়ু গুরুতর জখম হন। পরে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন স্বজনরা।
আহত যুবদল নেতা মোমেন আকন অভিযোগ করে বলেন, ‘মাহবুব ব্যাপারী দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীর দোহাই দিয়ে অবৈধভাবে কাউনিয়া খালে মাছ চাষ করে একাই ভোগ দখল করছেন। খবর পেয়ে সকালে লোকজন নিয়ে কাউনিয়া গ্রামে যাই। সেখানে যাওয়া মাত্র মাহবুব ব্যাপারীর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন রামদা দিয়ে আমাকে কুপিয়ে জখম করে।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব ব্যাপরী বলেন, ‘কাউনিয়া খালের দুই পাড়ের শতাধিক বাসিন্দা নিয়ে যৌথভাবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছি। মাছ বিক্রির জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গ্রামবাসী মিলে আমরা মাছ ধরছিলাম। এ সময় একদল সন্ত্রাসী নিয়ে যুবদল নেতা মোমেন আকন আমাদের মাছ লুট করতে আসে। এ সময় জনতার তারা হামলায় আহত হন।’
আমতলী হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান বলেন, মোমেন আকনের দুই পা, দুই হাত, চোখ উড়ুসহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১৫-২০টি কোপের চিহ্ন রয়েছে।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে কাউনিয়া জলমহলটির আয়তন ২৫ দশমিক ৯১ একর। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ডানিডার সহায়তায় খালের দুই পারের ৬৮ জন গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে ফজলুর রহমান খলিফাকে সভাপতি করে একটি মৎস্যজীবী সমিতি গঠন করা হয়। পরে বরগুনার জেলা প্রশাসক ওই বছর থেকে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য (২০১২ সাল পর্যন্ত) খালে মাছ চাষের জন্য গ্রামবাসীদের ইজারা দেন। ওই সময়ের পর ডানিডা চলে গেলে ও ইজারার মেয়াদ না থাকায় খালটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মাহবুব ব্যাপারী খালটি তার দখলে নেন। প্রায় ১২ বছর ধরে খালটি ভোগ দখল করে আসছেন তিনি।
এদিকে কাউনিয়া জলমহালটি অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল মাহবুব ব্যাপারীকে প্রধান করে ৯ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন চাওড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম। মামলায় তিনি অবৈধ দখল এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। এ বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাহাবুব ব্যাপারী অবৈধ ভাবে খালটি দখলে নিয়ে ভোগ দখল করে আসছেন।’
খালটির সাবেক ইজারাগ্রহীতা ফজলুর রহমান খলিফা বলেন, ‘আমি কাউনিয়া জলমহাল মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ছিলাম। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমরা কেউ খালটির ধারে কাছে যেতে পারি নাই।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’