তুহিন আহমদ, সিলেট প্রতিনিধি
গরম ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল সিলেটবাসী
ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতির কারণ দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সিলেটে মাত্র অতিরিক্ত বিদ্যুৎবিভ্রাটে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।
নিয়মানুযায়ী এনএলডিসি থেকে দেশের বিভিন্ন জোনে গ্রিড পর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা পরিমাপ, সরবরাহ ও বিদ্যুৎবিভ্রাট করা হয়ে থাকে। তবে সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বারবার জানানোর পরও বিদ্যুতের চাহিদা পরিমাপের ত্রুটির বিষয়ে লক্ষ্যপাত করেনি এনএলডিসি। এতে বিদ্যুৎবিভ্রাটের যন্ত্রণায় বিদ্যুৎ কার্যালয়ে এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় নগরবাসী। এমনকি অনেকসময় প্রতিক্রিয়া মারমুখী অবস্থায় পরিণত হয়।
এদিকে কয়েকদিন যাবত সিলেটে তীব্র গরমে নাকাল নগরবাসী। এরমধ্যে দিনে ও রাতে সবমিলিয়ে বিদ্যুৎবিভ্রাটয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টার হিসেবে দিনের প্রায় ১২ ঘণ্টাই ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎবিভ্রাটের কবলে থাকে সিলেটের নগরবাসী। এতে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই ক্ষতির পাশাপাশি বিপাকে রয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনএলডিসি যখন বিদ্যুতের চাহিদা পরিমাপ করে তখন বিদ্যুতের সব লাইন চালু থাকে। এতে সেটি স্বাভাবিকভাবে ৩০ শতাংশ কম দেখায়। কম দেখানোর কারণ হলো যখন বিদ্যুৎ থাকে না তখন আইপিএস, ফ্রিজ, চার্জিং লাইন, ফ্যান এসব জিনিস বিদ্যুতের লোড নেয়। যার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৪০ মেগাওয়াট বেড়ে যায়। তবে এনএলডিসি বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয় স্বাভাবিক সময়ের অনুপাতে। যার কারণে সিলেটবাসী চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পেয়ে থাকেন। এতে বেড়ে যায় বিদ্যুৎবিভ্রাটের পরিমাণ।
এদিকে এনএলডিসি সারা দেশের জোনভিত্তিক বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের একটি শিট তৈরি করে রাখে। ওই শিটে ৪ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য জোনে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ বরাদ্দ করলেও সিলেটের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখিয়ে বিদ্যুৎবিভ্রাট করতে বলা হয়েছে। ওই দিন ঢাকা জোনে বিদ্যুতের চাহিদা দেওয়া হয় ১ হাজার ২২৩ দশমিক ৯ মেগাওয়াট। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ। চট্টগ্রাম জোনেও ৮৮২ মেগাওয়াট চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়। তবে, সিলেট জোনে ১৭৮ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও স্থানীয় ঘাটতি দেখিয়ে ৩৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎবিভ্রাট করার কথা জানানো হয়।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর ধরেই লোড বরাদ্দ নিয়ে এমন অবস্থা বিরাজ করছে সিলেটে। অন্যান্য জোন থেকে সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না সিলেট জোনকে। এতে করে সিলেটের প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহককে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ভোগান্তি ও আক্রোশের শিকার হতে হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসকে।
সিলেট বিউবোর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর কাদির বলেন, ‘বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্ট আমাদের হাতে নেই। দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে অবগত থাকলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুৎবিভ্রাটয়ের বিষয়টা আমাদের হাতে না থাকলেও জনগণের ক্ষোবের শিকার আমাদেরই হতে হয়।’
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ২৬ লাখ। ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার থেকে চাহিদার থেকে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎবিভ্রাট করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডে-পিক আওয়ার এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টাকে পিক আওয়ার ধরা হয়। পিক আওয়ারের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিভ্রাট করতে হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দের বিষয়টি দেখে এনএলডিসি। চাহিদা পরিমাপের দিন তারা আমাদেরকে নির্দেশনা দেন যাতে সব লাইন চালু থাকে। তবে আমাদের বক্তব্য ছিল, তাদের প্রতি যে মিটারে ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ লোড রেকর্ড হওয়া আছে, সেই অনুপাতেই বরাদ্দ দিতে। তবে তারা সেভাবে না নিয়ে লাইন চালু রেখেই চাহিদার পরিমাপ করেন।
গ্রিড বাংলাদেশের সিস্টেম অপারেশন অফিসের প্রধান প্রকৌশলী ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী বি এম মিজানুল হাসান বলেন, ‘দুই দিন থেকে আমরা ঢাকাতেও লোডশেড দিচ্ছি। যেহেতু এখন আমাদের বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েছে, সেজন্য সব জোনেই লোডশেড সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ঢাকাতেও লোডশেড দেওয়া হয়েছে। আমরা সারা দেশেই একই অনুপাতে লোডশেডের বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। আগামী ১৫ তারিখের পর লোডশেড ক্রাইসিস কমে আসবে।’