এস এম রাফি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
চিলমারীতে অভিযোগ
ভবন স্থানান্তরে ৪০ হাজার ইট বিক্রি সভাপতি-দপ্তরির
চর শাখাহাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গেলো বন্যায় উপজেলার চর শাখাহাতি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীভাঙনের কবলে পড়লে ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেসময় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার ইট সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তবে সেই সব ইট নিলাম প্রক্রিয়া ছাড়াই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান ও দপ্তরি মিলনের বিরুদ্ধে।
কমিটির রেজুলেশন ও নিলাম ছাড়াই অবৈধ পন্থায় দুটি ভবন, ১টি ওয়াশ ব্লক এবং শহীদ মিনারের প্রায় ৪০ হাজার ইট বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, চর শাখাহাতী ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। বিদ্যালয়টি নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হলেও ওই বিদ্যালয়ের ২টি ঘর, ওয়াশ ব্লক এবং শহীদ মিনারের প্রায় ৪০ হাজার ইট রেজুলেশন ও কোনো নিলাম ছাড়াই অবৈধপন্থায় বিদ্যালয়টির সভাপতি কালা চাঁন, হাসান, মাফুজারসহ বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। তারা প্রতি হাজার ইট ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে দ্রত ইটগুলো সরিয়ে ফেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসান বলেন, আমি শেষ সময় ভাঙাচোরা ইট ৪ হাজার টাকার কিনেছি। টাকা টা সভাপতিকে (মশিউর) দিয়েছি। ওখানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো ইট হবে সব বিক্রি করছে।
অফিস সহায়ক মিলন বলেন, কমিটির লোকজন স্কুল সরানোর প্রথম দিন ৫ হাজার ইট বিক্রি করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ইট বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোছা. সাহিদা খাতুন বলেন, তিন মাস হলো যোগাদান করেছি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি সাহেরা খাতুন বলেন, আমি সভাপতিকে বলছি ইটগুলো কোথায় গেল। তখন আমার বাড়ি সরানোর কাজ চলায় ডাকলেও যেতে পারি নাই। এখন সভাপতি বলছে রফিকুল মেম্বারকে ইটের দায়িত্ব দিয়েছে। উনি কি করছে সেটা জানা নাই।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘আপনি চরের কমিটির লোক রফিকুল চাচার (মেম্বার) কাছে শোনেন। ইউএনও স্যার, টিও স্যারকে বলেন। ওনারা যাক। ৫০০ সাংবাদিক আইসেন। আমার স্বচ্ছতা থাকলে কিচ্ছু হবে না। এটা একটা গুজব ছড়াইতেছে। স্কুল স্থানান্তর করাতে দুই লাখ টাকা আমার খরচ। ইটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে ফোন দিবেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, স্কুলটি স্থানান্তরে ৯০ হাজার টাকা খরচের হিসাব অফিসে দেওয়া হয়েছে। ইট বিক্রি করে লেবারদের টাকা দেওয়া হয়েছে। কোনো নিলাম করা হয়নি। ৫ হাজার ইট আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম কিন্তু ইট বিক্রি করে টাকা আমি নেইনি মিলন (দপ্তরি) নিয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি ভাঙানোর সময় সভাপতি বলেছিলেন, ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পরে আমরা ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে বসে ৬০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি খরচ বাবদ। শেষপর্যন্ত তিনি এক টাকাও পাননি। তবে পরে জানতে পারছি তিনি ২-৩ নৌকা ইট সরিয়ে নিয়েছে। বাকিগুলো সরানো সম্ভব হয়নি। তবে নিলাম হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ওই কর্মকর্তা।
ইউএনও মিনহাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
পিডিএস/জেডকে