আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আমতলীতে অভিযোগ
৫ বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণ, টিনের ঘরে পাঠদান
বরগুনার আমতলী উপজেলার গুরুদল গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম তলা ভবন নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। কাজটি ১৮ মাসে শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের গাফেলতিতে ৫ বছরেও শেষ হয়নি। নিরুপায় হয়ে ছোট একটি টিন শেডেরে ঘরে পাঠদান করতে হয়। দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু পিলারের ওপর একটি চারতলা ভবন দাঁড়িয়ে রয়েছে। অন্য তলায় কিছু ইটের গাঁথুনি দিলেও অধিকাংশ জায়গা রয়েছে গাঁথুনি বিহীন। বৃষ্টির অজুহাত তুলে ভবনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭২ সালে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে ‘বঙ্গবন্ধু নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। ভবনের দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে সরকার ৩ কোটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৩ টাকা ব্যায়ে চতুর্থতলা একটি ভবন বরাদ্দ দেয় এই স্কুলের নামে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আহবান করা দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় যৌথ ভাবে পরিচালিত পটুয়াখালীর মেসার্স হাজী এন্টার প্রাইজ ও মেসার্স কহিনুর এন্টার প্রাইজ নামে পটুয়াখালীর দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক হচ্ছেন পটুয়াখালীর মো. জাহাঙ্গীর বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার। তিনি ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করেন। কার্যাদেশের তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২০ সালের ৬ মার্চের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু ৫ বছরেও ভবন নির্মাণ শেষ করেনি ঠিকাদার।
স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ঠিকাদার পরিমাণের চেয়ে রড, সিমেন্ট কম দিয়েছেন এবং নিম্নমানের বালু ইট ব্যবহার করেছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয়, সুরাইয়া ও মাইসা বলেন, ভবনের অভাবে তারা পুরাতন একটি টিনের ঘরে গাদাগাদি করে পাঠদান হয়। বৃষ্টির সময় ওই ঘরে পানি পরে। এতে বই খাতা ভিজে যাওয়ায় স্যারেরা তখন নিরুপায় হয়ে পাঠদান বন্ধ রাখেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আউয়াল বলেন, ঠিকাদার ভবন নির্মাণে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। দ্রুত ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক এবং বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল অফিসকে জানিয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি আরিফ উল হাসান অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারের দুর্নীতর কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তৈরি হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অলি আহাদ বলেন, ওই ভবন নির্মাণের বিষয়ে আমি অবগত না। শিক্ষা প্রকৌশল বরগুনা এ বিষয়ে আমাকে কখনো কোনো বিষয়ে কিছু জানায়নি।
এদিকে ঠিকাদার মো. জাহাঙ্গীর বিশ্বাস মোবাইল ফোনে বলেন, বৃষ্টির কারণে আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি আমি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম বলেন, তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।