যশোর প্রতিনিধি
অস্ত্র মামলায় আত্মসমর্পণের পর কারাগারে প্রেরণ
আড়াই দশক পর যশোরে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ফিঙে লিটন
যশোরের আনিসুর রহমান লিটনকে লোকজন চেনে ‘ফিঙে লিটন’ নামে। পুলিশর খাতায় তিনি ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’। ১৯৯৯ সালে একটি অস্ত্র মামলায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর টানা আড়াই দশক দেশের বাইরে থাকলেও যশোরের মানুষের কাছে এখনও আতঙ্কের নাম ‘ফিঙে লিটন’।
বুধবার দুপুরের দিকে গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে অস্ত্র মামলায় আত্মসমর্পণ করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন যশোর শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর বদলে গেছে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা। একে সুযোগ হিসেবে নিয়ে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেন আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন।
দেশের বাইরে থেকেই যশোরের নানা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন ফিঙে লিটন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও একাধিক খুনের ঘটনায় ফিঙে লিটনের নাম জড়িয়েছে তার অনুসারীরা। কিন্তু পর্দার আড়ালে থাকায় আইনের জালে তাকে আটকানো যায়নি।
ফিঙে লিটনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে যশোর কোর্টের ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন জানান, ‘১৯৯৯ সালে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় আনিসুর রহমান লিটনের ১০ বছর সাজা হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। ওই মামলায় বুধবার তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
- নিজে এক সময় বিএনপি করলেও ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় পরিবারের সদস্যরা
- সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও একাধিক খুনের ঘটনায় জড়িয়েছে তার অনুসারীরা
- ৫ আগস্টের দেশে ফিরলেও গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ
শোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, বিচারকের আদেশ প্রাপ্তির পর আনিসুর রহমান ওরফে ফিঙে লিটনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের সিডিআর মতে, তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। অন্যান্য যে-সব মামলার কথা শোনা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
জানা গেছে, যশোরের লোকজন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আলোচিত নাম ‘ফিঙে লিটন’। ১৯৯৯ সালে অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর ভারত, নেপাল, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কাতারে অবস্থান করেছেন। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও গ্রহণ করেছেন নেপালি পাসপোর্ট। তিনি আড়াই দশক ধরে দেশের বাইরে থাকলেও তার নামে ত্রাসের রাজত্ব ছিল যশোরে। তার দাপট কাজে লাগিয়ে অনুসারীদের চাঁদাবাজি, দখল, চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল ওপেন সিক্রেট। তবে পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ানোয় সরাসরি কোনো অপরাধে তাকে সম্পৃক্ততার প্রমাণ করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তার নামে একটি অস্ত্র মামলা ছাড়া আর কোনো মামলা আছে কিনা সেই তথ্যও দিতে পারেনি পুলিশ।
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও আনিসুর রহমান লিটন আধিপত্য বজায় রেখেছেন তার এলাকা শহরের মোল্লাপাড়া, বারান্দিপাড়া ও মণিহার এলাকায়। নিজে এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার সরকারের আমলে পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় করেছিলেন। ২০২১ সালে যশোর পৌরসভা নির্বাচনে ১ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ফিঙে লিটনের ভাই সাইদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন। তার বিজয়ের নেপথ্যে ফিঙে লিটনের প্রভাব ছিল বলেও জনশ্রুতি আছে।
এছাড়া সর্বশেষ ২০২৪ সালের সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন ফিঙে লিটনের স্ত্রী সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ফাতেমা আনোয়ার। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে নির্বাচনের আগে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাকে যুবমহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফিঙে লিটন দেশের বাইরে থাকলেও দেশে পরিবহণ ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ারের নামে। লিটন ট্রাভেলস নামে তাদের পরিবহণ ব্যবসা রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পরে দেশে ফেরা আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন, নাকি বিএনপির রাজনীতিতে মাঠে নামবেন সেটি নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন।