তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
গোমতীর কবলে ১৫ দিনে ৬০ পরিবার বাস্তুহারা
কুমিল্লার তিতাসে গোমতী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে ১৫ দিনে নারান্দিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের ৬০টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে বসতবাড়িসহ একাধিক কবরস্থান বিলিন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে একাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মঙ্গলবার নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নারান্দিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে গোমতী নদী প্রবাহিত হয়েছে। দুটি পাড়ে বিভক্ত নারান্দিয়া পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের মধ্যে গোমতী নদীর পাড়ঘেষা পরিবারগুলো এখনো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমপাড়ের উত্তরপাড়া, মধ্যপাড়া ও সরকার বাড়ি। পূর্বপাড়ের ভূঁইয়া বাড়ি, নয়াপাড়া, সরকার বাড়ি ও বালুরচর বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের অনেকে আশেপাশের আত্মীয় ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারান্দিয়া পশ্চিমপাড়ের উত্তরপাড়ার আ. ছালাম একই গ্রামের আক্তার হোসেনের বাড়িতে, আলী আহমেদের বাড়িতে মো. বিল্লাল হোসেন, আবুল বাশার তার বড় বোনের বাড়িতে, শিপন মিয়ার বাড়িতে তোতা মিয়া পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছে। বাদশা মিয়া অন্যত্র না গেলেও বিলিন হওয়া অংশের পাশে তেরপাল (তিরপল) দিয়ে বসবাস করছে।
এছাড়া পশ্চিমপাড়ের উত্তরপাড়ার বসতবাড়ি হারিয়েছেন মো. মিজান হোসেন, আব্দুর রহমান, লিলু মিয়া, আবুল কাশেম, হাসেম সরকার, দেলোয়ার হোসেন, আজহার। একই পাড়ের মধ্যপাড়া বসতবাড়িহারা পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে সাগর সরকার, মান্নান সরকার, জাহাঙ্গীর আলম, মনোয়ারা বেগম, হাজি হাকিম, নজরুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, হক সাহেব, আলাউদ্দিন, আ. হাকিম সরকার, জাহাঙ্গীর আলম, আমান উল্লাহ, আক্তার খলিফা, তোফাজ্জল মাস্টার, শাহজুদ্দিন, ফারুক আহমেদ, মাইনুদ্দিন।
এদিকে নারান্দিয়া পূর্বপাড়ের ভূঁইয়াবাড়ি ও নয়াপাড়া বসতবাড়ি হারানো পরিবারের মধ্যে রয়েছে কাউছার আহমেদ, ডালিম আহমেদ, আবুল কাশেম, দুলাল মেম্বার (সাবেক), ওহেদ আলী, শহিদুল্লাহ, মো. সাধন মিয়া, শাহ জালাল, জোযন মিয়া, মহিউদ্দিন, মোস্তাক আহমেদ, জালাল উদ্দিন সরকারের পরিবার। বালুরচর এলাকার এবাদুল হক, তাজুল ইসলাম, ফুল মিয়া বেপারী, আবদুল খালেক, সোবহান হোসেন এবং পূর্বপাড়ের সরকার বাড়ির মধ্যে রয়েছে জালাল উদ্দিন সরকার, আলমগীর সরকার, আলাউদ্দিন সরকার, ছিদ্দিকুর রহমান, রমজান হোসেন, হাছিনা আক্তার, মো. হাবিব আহমেদের বসতবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে।
পূর্বপাড়ের সরকার বাড়ির হাছিনা আক্তার বলেন, ‘নদীতে আমার বসতভিটা বিলিন হওয়ার পর আমি খলিলাবাদ গ্রামে জহির ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ ভূঁইয়া বাড়ির মৃত শফিক ভূঁইয়ার ছেলে মো. শাহজালাল বলেন, ‘বসতভিটা হারিয়ে আমি নারান্দিয়ার আদিল ভাইয়ের বাড়িতে পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছি।’
নারান্দিয়া ইউপি সদস্য মো. মফিজুল ইসলাম জানান, বন্যা পরবর্তী পূণর্বাসনের জন্য ডা. গোলাম মহিউদ্দিন জিলানী, মো. আদিলুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন সরকার, কাউছার আহমেদ, নজরুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ ও তুষার আহমেদসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ১৫ দিনে পঞ্চাশের উপরে বাড়ি বিলিন হয়েছে। প্রতিদিনই ১টি-২টি করে বাড়ি বিলিন হচ্ছে। পানি যত কমছে, বাড়িঘর বিলিন হওয়ার আশংকা ততই বাড়ছে। এখনও ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন।