সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ঐতিহ্য হারাচ্ছে রায়গঞ্জের জয়সাগর দীঘি
সাগরে মানেই তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শোঁ শোঁ আওয়াজ। উত্তাল ঢেউ, নিম্নচাপের প্রভাবে গর্জে ওঠা জলোচ্ছ্ােসর ভয় এসবের কোনোটাই নেই সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জয়সাগরে। তবুও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা আসেন জয়সাগর দেখতে। জয়সাগর আসলে সাগর নয় এটি একটি বিশাল দিঘি।
জানা গেছে, উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছিতে অবস্থিত এই জয়সাগর। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই দীঘির পাড়ে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। প্রাচীন এই দীঘিটি বিশালাকার। প্রাচীনকালে দীঘিটির দৈর্ঘ্য ছিল আধা মাইল, প্রস্থ ছিল আধা মাইল এর কিছু কম, সব মিলে এর আয়তন ছির প্রায় ৫৮ একর। জয়সাগরের চার পাড়ে ২৮টি বাধা ঘাট দিয়ে জয়সাগর দীঘি তৈরি করা হলেও, বর্তমানে এ ঘাটের কোনো চিহ্ন নেই। বিশাল দীঘিটির ভিতরে রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি দীঘি। অতীতের জয়সাগরের জৌলুস আগের মতো আর নেই। সংস্কারের অভাবে দীঘির পাড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দীঘি এলাকায় অবাধে গবাদি পশু চড়ানোয় এবং যত্রতত্র পশুর মলত্যাগে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
নিমগাছি গ্রামের আব্দুর রহিম, আব্দুল মালেক ও শেফালি বেগম জানান, ঐতিহ্য রক্ষায় দীঘিটির সংস্কার বা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এদিক থেকে। জয়সাগরের পূর্ব পাশে দর্শনার্থীদের বসার জন্য সিমেন্টের চেয়ার এবং টয়লেট রয়েছে। কিন্তু অযত্মের কারণে সেগুলিও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে প্রাচীন এ দর্শনীয় স্থান।
স্থানীয়রা জানান, জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হলেও আজ পর্যন্ত এ দীঘিটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েক শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটির সংস্কার ও উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে জয়সাগর তার হারানো জৌলুস ফিরে পেয়ে হয়ে উঠতে পারে স্থানটি।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, বিগত বছরগুলোতে শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি জয়সাগরে ভিড় করত। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় ও শিকারিদের উৎপাতে অতিথি পাখিরা আর আসে না এখানে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহিনুর রহমান জানান, ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে মৎস্য বিভাগ কে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই থেকে জয়সাগরের পারে অবস্থানকারীদের সংগঠিত করে সমিতির মাধ্যমে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে সমিতি ভূক্ত সদস্যরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানান, জয়সাগরকে তার পুরানো ঐতিহ্য অর্থাৎ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য আগামীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।