আকবর হোসেন, মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)
ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
আজ যারা ছাত্র আগামী দিন তারাই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিল ছাত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনেক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সব সময় আমাদের লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে ছাত্রদের নিয়ে। যারা অতীতে ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিল তারা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্র সমাজকে এবং ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়েছে।
রবিবার (৭ জুলাই) কুমিল্লা জেলা লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল এই দুই উপজেলায় আলাদাভাবে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের ছাত্রলীগ সব সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে। ছাত্রলীগ কখনো টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত হবে না। ছাত্রলীগের নেতাদের অন্যরা অনুসরণ করবে। কেউ কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত হলে ছাড় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি সারা জীবন লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলন করেছেন। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। যার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল আমরা একটি গর্বিত জাতি এবং উন্নত দেশ হব। ছাত্রদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার জন্য যাত্রা আরম্ভ করেন। বঙ্গবন্ধু ভাবলেন সিঙ্গাপুর যদি এত উন্নত হতে পারে, ইউরোপ যদি এত উন্নত হতে পারে, আমেরিকা যদি এত পরিবর্তন হতে পারে তাহলে বাংলাদেশের পরিবর্তন হতে এত অসুবিধা কোথায়? স্বাধীনতার পর তাই বঙ্গবন্ধু যাত্রা আরম্ভ করলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে স্থান করে নিয়েছি। তারপর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করার পর বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এই দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করলেন। বর্তমানে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব বর্তমানে বাংলাদেশের সুনাম করছে একমাত্র শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণে। আজকে আমরা স্বপ্ন দেখি আমরা সিঙ্গাপুরের মতো একটি দেশ হব। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করেছি। গত ৫ বছর আমাকে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আমি আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছি এবং বর্তমানেও করছি।
এছাড়া ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিনহাদুল হাসান রাফি। মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান শামীম। লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাহ উদ্দিন সানি। সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ অটিজমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল কবির দীপু। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল পিয়াস।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বিপ্লবের সঞ্চালনায় ও লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম তুষার, পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফ খান স্বাধীন ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান সিদ্দিক হাসিব, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফসান জামিসহ আরো অনেকে। পরে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে নবনির্বাচিত সভাপতি হয়েছেন ফয়সাল মাহমুদ ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মেহেদী হাসান। এছাড়াও লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সালাহ উদ্দিন সানি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আল আমিন হোসেন রায়হান এবং লাকসাম পৌরসভা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন কাউছার আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক হন ফেরদৌস আলম সৌরভ।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তেই বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল দেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব ধর্ম জাতির মানুষ সম্মিলিতভাবে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করবে। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্র।
গতকাল রবিবার কুমিল্লার জগন্নাথপুরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে ধর্মসভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে। এই বিভাজন আমরা মানতে পারিনি বলে পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশে তাই কোনো ধর্মীয় বৈষম্য থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান। তিনি এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেন যেখানে আপনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা মুসলিম যে ধর্মেরই হন না কেন আপনার সমান অধিকার থাকবে। শুধু ধর্মীয় উৎসব পালনে নয়, রাষ্ট্রের সব নাগরিক অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবেন। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র গঠনে যে রূপরেখা তৈরি করেছে তা গড়তে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সভাপতি শ্রীমান সুদর্শন দাশ ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ধর্মসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানসহ আরো অনেকে।