লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাট-৩ আসন
আ.লীগ নেতা অ্যাড. মতিয়ার মনোনয়ন পক্ষে হাজারো মানুষের মিছিল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট সদর-৩ আসনে অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের দলীয় মনোনয়ন পক্ষে মিছিল করেছে সমর্থক ও আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী। সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট সদর-৩ আসনে নৌকার মাঝির দায়িত্ব দিতে মতিয়ারের সমর্থনে কয়েক হাজার লোকজন পথে নেমে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানায়। এই আসনে দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তার সমর্থনে সোমবার দুপুর থেকে দলের হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ লোকজন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জড়ো হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মতিয়ারের সমর্থনে মিছিল বের করে। মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলার প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড়ে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে মাঠের নেতা অ্যাড. মতিয়ার রহমানকে লালমনিরহাট সদর-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করার দাবি জানান।
জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে গত ২৩ বছরে লালমনিরহাট সদর-৩ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের ৪ জন নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাট সদর-৩ আসনটি বরাবরই দখলে ছিল। বিএনপির সাংগঠনিক প্রভাবের কাছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে কখনো পেরে উঠেনি।
এর কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলেন, দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা থেকেছে অবহেলিত। এ কারণে ধীরে ধীরে সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই কারণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতিয়ার রহমানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান তারা।
ইতোমধ্যে মতিয়ার রহমানের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ সাংগঠনিক চিঠি কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে লালমনিরহাট সদর-৩ আসনে দলীয় মনোনয় পাওয়া জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তবে বরাবরের মতো এবারও জোটগতভাবে জাতীয় পার্টিকে লালমনিরহাট-৩ আসনটি ছেড়ে না দিলে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান অথবা সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমি এবার মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জোড় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যে মানুষটির দিন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের সমস্যা সমাধান করতে, আর রাতে ঘুমাতে যান নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে-সেই মানুষটিকে আমরা এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে পেতে চাই। আমাদের এই মাঠের নেতা দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করার কাজটি সুনিপুনভাবে করে যাচ্ছেন। আমাদের অভিভাবক মতিয়ার রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবী ও প্রত্যাশায় ইতিমধ্যে কেন্দ্রে আমাদের মতামত জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ‘সারা দেশের রাজনৈতিক মাঠের চিত্র একরকম হলেও লালমনিরহাট সদর আসনটি একটু ব্যাতিক্রম। লালমনিরহাট সদর আসনটি বিএনপির হেভিয়েট নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর নিজ নির্বাচনী এলাকা। সেই সুবাদে এখানে দলীয় নেতা কর্মীদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কারণ এই আসনে আসাদুল হাবিব দুলু বেশ জনপ্রিয় এবং সাংগঠনিকভাবে দক্ষ একজন রাজনীতিক। তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে নেতা কর্মীদের অনেক বেশী চাপ নিতে হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের সেই চাপ মাথায় নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক মতিয়ার ভাই সংগঠন গুছিয়েছেন।’
কামরুজ্জামান সুজন আরো বলেন, মতিয়ার রহমানের শ্রমের ঘাম, অর্থ, মূল্যবান সময়ের বিনিময়ে তিনি এখানে সংগঠনটি শক্তিশালী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তাই তাকে রাজনৈতিক ভাবে মূল্যায়ন করা না হলে এই আসনে সংগঠনটি মারাত্মক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। মতিয়ার রহমান মনোনয়ন পেলে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে যতটা সহজ হবে, অন্য কাউকে দিয়ে সেটি অত সহজ হবে না। দলের ঐক্যের স্বার্থে আমরা অ্যাড. মতিয়ার রহমানের মনোনয়ন চেয়েছি।’ তবে সভানেত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকার বৈঠা তুলে দিবেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তার পক্ষে নৌকার কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
পিডিএস/এএমকে