সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
সিংড়ায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

নাটোরের সিংড়ায় গ্রামাঞ্চলে গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রাতে ঠান্ডা-হিমেল বায়ু আর সকালের শিশির ভেজা ঘাস-পাতা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। পাশাপাশি চলছে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। খেজুর গাছ পরিচর্যা-পরিষ্কারসহ রস সংগ্রহের উপযোগী করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা অঞ্চলে সড়ক, জমির আইল, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে প্রায় ৬০ হাজার খেজুরের গাছ। এসব গাছ থেকে গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬৫ মেট্রিক টন। খেজুর গাছের রস সংগ্রহের ওপর প্রায় ২ হাজার পরিবার নির্ভরশীল। শীত মৌসুমে ৭৫ দিনে প্রতিটি গাছ থেকে ১৭৪ কেজি রস পাওয়া যায়। আর প্রতিটি গাছের রসে গুড় উৎপাদন হয় ১৭ দশমিক ৪০ কেজি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, কেবল শীতকাল এলেই অযত্নে ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা এই খেজুর গাছের কদর বাড়ে। খেজুরের গাছ অন্য কোনো ফসলের ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ গুনতে হয় না। ঝোপ জঙ্গলে কোনো প্রকার যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ। শুধু শীত মৌসুম এলে নিয়মিত পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করতে হয়।
একজন গাছি শীত মৌসুমে ৭০-৭৫ দিনে একটি খেজুর গাছ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন। এছাড়া খেজুরের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরিসহ খেজুরের গাছ কেটে ঘরের তীর তৈরি করা হয়।
সিংড়া পৌরসভার শোলাকুড়া মহল্লার রফিকুল ইসলাম রফু জানান, প্রতি বছর তিনি অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতেই গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। কোনো কোনো সময় বাড়ি থেকেও গুড় বিক্রি হয়।
চকসিংড়ার আজাহার শাহ্ জানান, প্রতি বছর ৫০টির মত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি। শীতের সময় খেজুরের গুড় তৈরি ও বিক্রি করে তার সংসার ভালোই চলে। রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলা থেকে আগত কয়েকজন গাছি জানান, এ এলাকার খেজুরের গুড় প্রসিদ্ধ। এখানকার গুড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই বাজারজাত করা হয়। কোনো সময় দেশের বাইরেও পাটালি গুড় পাঠানো হয়।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, আমরা গাছিদের খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহ্ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। খেজুরের গুড়ের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। খেজুরের রস ও গুড়কে ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ইতোমধ্যে গাছিরা খেজুরের রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
পিডিএস/এস